[জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামি তার প্রথম উপন্যাস ‘হিয়ার দ্য উইন্ড সিং’-এর প্রকাশনার চল্লিশতম বার্ষিকী উপলক্ষে কিয়োডো নিউজে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তার সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘কিলিং কমেন্ডেটর’, লেখার বিবর্তন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হিংস্রতার উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাহিত্য সমালোচক ইয়ুটাকা ইয়ুকাওয়া ও কিয়োডো নিউজের ফিচার লেখক এটসুরো কয়ামা। সাক্ষাৎকারটির বঙ্গানুবাদ করেছেন মনোজিৎকুমার দাস।]
কিয়োডো নিউজ: চল্লিশ বছর ধরে আপনি লেখালেখি করছেন। এটা আপনার জন্য একটি বড় সাফল্য ও অর্জন, কী বলেন?
হারুকি মুরাকামি: ঠিক চল্লিশ বছর আগে, মে মাসে আমি ‘গুঞ্জ অ্যায়ার্ড ফর নিউ রাইটার্স’ পাই। আমার যতটুকু মনে পড়ে, মে মাসের আট তারিখে টোকিও’র সিম্বাসি এলাকার ডাই-ইচি হোটেলে সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। প্রতি দশ বছরে আমি টার্নিং পয়েন্ট পেয়ে যাই। টার্নিং পয়েন্টেগুলোতে আমার লেখার ধরন এবং গল্পের আঙ্গিকে পরিবর্তন আসে। প্রতিবার নতুন একটি লক্ষ্য থাকে, যে কারণে লেখালেখিতে কখনোই অবসাদ বোধ করি না। আমি এটাকে ভালোই মনে করি।
কিয়োডো নিউজ: সম্প্রতি আপনার নতুন উপন্যাস ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ পেপারব্যাক আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই উপন্যাসটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
মুরাকামি: উপন্যাসটি শুরু করেছিলাম একটি শিরোনাম দিয়ে। যা অবশ্যই মোজার্টের অপেরা ‘ডন জোভানি’ থেকে নেওয়া, কিন্তু ‘কিলিং কমেন্ডেটর’-এর শব্দগুলোর এক অচেনা ক্লান্তিহীন প্রতিধ্বনিই আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। আমি ভাবলাম, আমি এই শিরোনামেই জাপানের আবহ ধরে রেখে যদি একটা গল্প লিখতে পারি, ব্যস এভাবেই।
কিয়োডো নিউজ: তাহলে এটা কেবল শিরোনাম থেকেই শুরু হয়েছে?
মুরাকামি: একই ঘটনা ‘কাফকা অন দ্য শোর’-এর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। আমি প্রথমে শিরোনাম নিয়ে ভাবি। এরপর গল্পটা কেমন হবে, তা ভাবি। তারপর লেখা শুরু করি। এ কারণে লিখতে আমার এত সময় লাগে। কিন্তু ‘নরওয়েজিয়ান উড’ এর ব্যতিক্রম ছিল। এটা লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিরোনাম নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি।
কিয়োডো নিউজ: আমার মনে পড়ে, ‘নরওয়েজিয়ান উড’-এর ক্ষেত্রে আরেকটি সম্ভাব্য শিরোনাম ছিল ‘দ্য গার্ডেন ইন দ্য রেইন’।
মুরাকামি: আর ‘কিলিং কমেন্ডেটর’-এর জন্য আমি ভাবলাম, উয়েদা আকিনারির (১৮ শতকের লেখক) ‘নিশে নো ইনিশি’র (ফেট ওভার টু জেনারেশনস) গল্পের কিছু উপাদান যদি দিতে পারি।
কিয়োডো নিউজ: আপনি মনে হয় ‘হারুসামে মোনোগাটারি (বসন্তকালীন বৃষ্টির গল্পসমগ্র)’ থেকে একটি গল্পের কথা বলছেন, যেখানে কবর থেকে ‘সকুশীনবুতসু (বৌদ্ধ মমি)’ তোলার কথা বলা হয়েছে। সেটা নয় কি?
মুরাকামি: উত্তরপূর্ব তোওহোকু অঞ্চলে ভ্রমণের সময়ে আমি অনেক মমি দেখেছি। কিয়োটোতে থাকার সময়ে একটি বইয়ের দোকানে একটা বই পড়েছিলাম। সেখানে কিভাবে মমি বানানো হতো, তা ব্যখ্যা করা হয়েছিল।
কিয়োডো নিউজ: উয়েদার গল্পগুলো নিয়ে আরও একটি গল্পসমগ্র ছিল ‘উগেতসু মনোগাতারি’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘জ্যোৎস্না ও বৃষ্টির গল্পসমগ্র’। কাফকার ‘অন দ্য শোর’ বইয়েও উঠে এসেছে এমনটা, ঠিক কি না?
মুরাকামি: আমার কাছে আকিনারির গল্প ভালো লাগে। বিশেষ করে ‘নিশে নো এনিশি’ গল্পটা। গল্পটার মানে হলো, একজন মমিকৃত বৌদ্ধ ভিক্ষুককে কবর থেকে তুলে এনে জীবন দান করার পর দেখা যায়, বৌদ্ধ ভিক্ষুকটি যেকোনো কাজে আসার মতো মানুষে পরিণত হয়। উয়েদা আকিনারি দুনিয়াকে নিয়ে বিদ্রূপ করতেন তাই তিনি এমন গল্প লিখতেন। যা কিনা স্বাভাবিক অতিপ্রাকৃতিক গল্পের মতো না।
কিয়োডো নিউজ: হাঁ, বুঝলাম।
মুরাকামি: আমার বাবার বাড়ি হচ্ছে কিয়োটো শহরে। জোডো-শু-এর একটি বৌদ্ধ মন্দিরে বাবা। বাবা যেদিন মারা যান, মন্দিরের পুরোহিত বৌদ্ধসূত্র পাঠ করছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম, এই মন্দিরের নিচে আকিনারির সমাধি আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সমাধিটি দেখাতে পারবেন কি না। তিনি নিয়ে গেলেন। সমাধির ওপর কাঁকড়া খোদাই দেখে আমি এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, আকিনারি মানববিদ্বেষী ছিলেন। তাই তার শেষ ইচ্ছে ছিলো, এমন কিছু দিয়ে তার সমাধি খোদাই হোক, যা কিনা পাশ দিয়ে হাঁটে।
কিয়োডো নিউজ: গল্পটা অনেক সুন্দর।
মুরাকামি: আকিনারি শেষ বয়সেও মন্দিরটি দেখাশোনা করতেন।
কিয়োডো নিউজ: আপনার ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ উপন্যাসের সঙ্গে আকিনারির ‘নিশে নো ইনিশি’-র সঙ্গে একটু মিল পাওয়া যায়। ‘কিলিং কমেন্ডেটর’-এর নায়ক যখন তার বাড়ির ঝোপের নিচে গর্ত খোঁড়াচ্ছিল, তখন পুরাতন একটি গর্ত তার নজরে পড়ে।
মুরাকামি: আমার গল্পের বিষয়সমূহ আসলে আমাদের অবচেতন মনকে টেনে আনে। আমরা যখন আমাদের চেতন মনের খুব গভীরে যাই, তখন আমরা একদম শেষ দিকে, খারাপ জীবে পরিপূর্ণ এক অদ্ভুত জগতে যাওয়ার পথ খুঁজে পাই। সবশেষে, সেই অন্ধকার জগৎ থেকে আমরা ফিরে আসার জন্য আমাদের সহজাত বুদ্ধির ওপর নির্ভর করি, তাই তো? আমাদের সচেতনতার দিকগুলোকে ধারালো করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকে না এবং আমরা আমাদের সহজাত বুদ্ধির কাছে আত্মসমর্পণ করি। আমরা লজিকের ওপর নির্ভর করে থাকতে পারি না, কারণ, একভাবে এটা খুবই বিপদসংকুল। ‘অ্যা ওয়াইল্ড শিপ চেস’ গল্পে ‘শিপ ম্যান’ আছে। ‘দ্য উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকেল’-এ কূপের ওপাশের দুনিয়া ছিল। ‘হার্ড-বোয়েল্ড ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যান্ড দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ ‘ইনকিলিংস’ আছে। আর এখন আমাদের আছে ‘দ্য কমেন্ডেটর’
কিয়োডো নিউজ: কমেন্ডেটরকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তার জন্য আমি অনেক বার বইটা পড়েছি। লোকটার আকার প্রায় ষাট সেন্টিমিটারের মতো ছিল। সে খুবই নজরে আসার মতো ছিল।
মুরাকামি: যদি সে অতিকায় হতো, তাহলে সঙ্গে সাথে কাজ করাটা কঠিন হতো। তাকে দেখতেও ভীতিকর লাগতো। যেহেতু সে ছোট আর আঁটোসাঁটো, তাই সে সহজেই আমাদের মনে ধরে যায়। সবকিছুই যেন আনুপাতিকভাবে ছোট হয়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনে তার উপস্থিতি আছে আলাদাভাবে।
কিয়োডো নিউজ: কেএফসির ‘মাসকট কর্নেল স্যান্ডার্স’ ও ‘জনি ওয়াকার’-এর মতো ‘কাফকা অন দ্য সোর’-এ অ-মানব আছে। কিন্তু এবারই মনে হয় প্রথম যে, অ-মানব চরিত্রটি গল্পের সঙ্গে সঙ্গে অনেকবার উপস্থাপিত হয়েছে।
মুরাকামি: হ্যাঁ, এটা সত্য যে, কমেন্ডেটর ছাড়া অন্য অ-মানব চরিত্রদের, গল্পের প্রয়োজনে এতবার উপস্থাপন করা হয়নি।
কিয়োডো নিউজ: কমেন্ডেটর নিজেকে একটি ‘আদর্শ’ হিসেবে পরিচয় দেয়। সহজ করে বললে বলতে হয় এটি একটি ধারণা।
মুরাকামি: তা ঠিক। কিন্তু আমি মনে করি না, এই একটি কথা দিয়েই তাকে বোঝানো হবে। উপন্যাসটি লেখা শেষ করার পর আমি এটা নিয়ে ভেবেছিলাম, আমি মনে করি যে, কমেন্ডেটর হলো প্রধান চরিত্রের কতগুলো ভিন্ন সত্তার মিশ্রণ। আমার এটাও মনে হয় যে, সে হলো প্রতিটি চরিত্রের প্রতিরূপ অথবা এমনও হতে পারে যে, সে হলো অতীতের কোনো বার্তাবাহক। যাই হোক, এগুলো আমার মতে, সম্ভাব্য চিন্তা, যদিও এই ধারণাগুলো সঠিক কি না, তা আমি নিজেও নিশ্চিত নই। তাই, আমি এটা পাঠকের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।
কিয়োডো নিউজ: আপনি এটাও লিখেছেন যে, কমেন্ডেটর এক প্রকারের প্রাকৃতিক ধারণাপ্রসূত।
মুরাকামি: আমি এটা বলবো না যে—সে ভালো, এমনকি এটাও বলছি না যে, সে খারাপ। আমি তাকে একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করি, যে কিনা সেসব মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে গেছে। সে সবার কাছে দৃশ্যমান নয়। তবে যারা তাকে দেখতে পারে, তাদের কাছেই দৃশ্যমান হয়।
কিয়োডো নিউজ: ভাষাগত দিক থেকে দ্য কমেন্ডেটরের কথায় পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এমনকি সে যখন একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তখন সে সবসময় ওই মানুষকে ‘শকুন’ বলে অভিহিত করে।
মুরাকামি: ওই শব্দগুলো সঠিকভাবে অনুবাদ করার সময় অনুবাদকদের কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।
কিয়োডো নিউজ: গল্পের নায়ক, যাকে কিনা ‘আমার বন্ধুরা’ হিসেবে অবহিত করা হয়, সে মনে করে যে, কমেন্ডেটরের পুরুষ এবং বচন সম্পর্কে কোনো ধারণা বহন করে না। আর ‘আরানাই’ হচ্ছে ‘আরু’র নেতিবাচক শব্দ যা ইঙ্গিত দেয় যে, কমেন্ডেটর হলো একটি ধারণাগত সত্তা।
মুরাকামি: এটা ঠিক। এমনকি এটাও মনে হয় যে, এটা জার্মান দর্শনের অনুবাদের মতো মনে হয়। জার্মান ভাষায় ‘আরানাই’ শব্দটিকে মনে হবে ‘নিট শায়েন’। আমি বহু বছর ধরে অনুবাদ করে আসছি, তাই শব্দকে নানাভাবে ব্যবহার করাটা আমার কাছে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই সেসব শব্দগুলো স্বাভাবিকভাবে আমার মনে আসবে। শব্দের প্রতিধ্বনিও আমার আছে গুরুত্বপূর্ণ। সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়াও এর একটি কারণও হতে পারে।
কিয়োডো নিউজ: আপনি অনেক অনুবাদ করেছেন। আপনি বিদেশেও অনেক বছর থেকেছেন। তারপরেও আপনার সব উপন্যাসের স্থান জাপান। ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ এর পটভূমিও জাপান।
মুরাকামি: আমি ‘ভেতর’ ও‘বাহির’-এর মধ্যে বিনিময় করতে পছন্দ করি, তাই এমনটা হয়েছে। এই উপন্যাসের কমেন্ডেটরের কথাই ধরুন—যাকে কিনা পশ্চিমা মানুষের মতো হবার কথা ছিলো—সে কিনা প্রাচীন আসুকা আমলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতকের জাপানিজ পোশাক পরে আবির্ভূত হয়েছে। এই অনৈক্যের কারণে পাঠক মুগ্ধ হবেন, এমনকি কৌতূহলীও হবেন বলে আমি মনে করি। সে যদি ডন জোভানির মতো পোশাক পরত তাহলে তা তেমন গল্প হতো না।
কিয়োডো নিউজ: তা কিছুটা ঠিক।
মুরাকামি: আমি যখন লেখালেখি শুরু করেছিলাম, তখন অনেক উপন্যাসই বিদেশের পরিবেশ নিয়ে লেখা হয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে সেগুলো তেমন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য শৈলী নিয়ে এ কাজটি করা খুব কঠিন ছিল, তাই সাহিত্যিক অভিধানকে পুনর্বিন্যাস করার প্রয়োজন হলো।
কিয়োডো নিউজ: যে কাজগুলো জাপানের অনুষঙ্গে করেছিলেন, সেগুলো পরবর্তীকালে বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
মুরাকামি: আমার মতে, তা প্রকৃতপক্ষে আমার ‘চিন্তা’ বা ‘ধারণা’-কে প্রকাশ করে। কমেন্ডেটর প্রাচীন জাপানিজ পোশাক পরে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও ওখানে মানিয়ে যেতে পারবে। অন্যদিকে আপনি সেই একই ধারণা চিন্তা করেন কিন্তু একটি দেশের ভাষার শব্দকোষের কারণে ধারণাটার ব্যাখাই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আমি যখন লিখি তখন আমি চিন্তা করি আমার ধারণা কীভাবে পরিবর্তিত হয় ও খানিকটা মিলে যেতে পারে।
কিয়োডো নিউজ: উপন্যাসের শিরোনাম বলে দেয়, কমেন্ডেটরকে এই উপন্যাসে মারা হয়। ‘ডন জোভানি’ অপেরার শুরুতে কমেন্ডেটর মারা যায় এবং আপনার উপন্যাসেও সে আবার খুন হয়।
মুরাকামি: আমার মনে হয় এবারই প্রথম ‘খুন’ শব্দটি আমি আমার কোনো বইয়ের শিরোনামে ব্যবহার করেছি। ‘নরোয়েজিয়ান উড’-এর কথাই ধরুন, এই উপন্যাসে কিছু চরিত্রই আছে যারা কিনা আত্মহত্যা করে।। কিন্তু এরা নিজেদেরই হত্যা করছে। সেই গল্পে মৃত্যু, আসলে খুনেরই নামান্তর। ‘হার্ড-বয়েল্ড ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যান্ড দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ ‘দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ প্রবেশ করা আর মরণ একই কথা। ‘কাফকা অন দ্য শোর’-এর নায়ক যখন গভীর বনের মধ্যে হাঁটছে, তখন সে কিন্তু মৃত্যুপুরীর মধ্য দিয়েই হাঁটছে।
কিয়োডো নিউজ: ‘এক কিউ চুরাশি’ উপন্যাসে, একটি কাল্ট দলের নেতা, তাকে খুন করতে উপন্যাসের নায়িকা আওমামের প্রেমিক ট্যাংগোকে বাঁচানোর উদ্দ্যেশে প্ররোচনা দিয়েছিল। ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ উপন্যাসেও মারিয়া নামের হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়েকে বাঁচানোর জন্য কমেন্ডেটর নায়ককে খুন করার প্ররোচনা দিয়েছিল। তাই নায়কও সাধারণ ছুরি দিয়ে তার বুকে ছুরির আঘাত করে মেরে ফেলে।
মুরাকামি: খুনের সময় শরীরে যে অনুভূতি হয় তা গুরুত্বপূর্ণ। ‘কাফকা অন দ্য শোর’-এ জনি অয়াকার স্ক্যাল্পেল দিয়ে বিড়ালটিকে মেরেছিল। ফালা ফ্যালা করে কাঁটার অনুভূতিটা গুরুত্বপূর্ণ যতক্ষণ না পর্যন্ত তা বাস্তবিক বলে ধারণা হয়।
কিয়োডো নিউজ: আপনি কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?
মুরাকামি: পৌরাণিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় যে, হত্যাকাণ্ড থেকে নতুন কিছুর জন্ম দেয়। পিতৃহত্যা নিয়ে অনেক পৌরাণিক গল্প আছে। কাউকে মেরে কোনো প্রাণী নব জীবন পায়। এরকম গল্প অনেক পুরাণে আছে। এই ধরুন, দেহাবশেষ থেকে নতুন কুঁড়ির জন্ম হয়। এরকম অনেক গল্প জাপানের ‘কোজিকি’-এ আছে।
কিয়োডো নিউজ: তাহলে এটা মৃত্যু ও পূর্ণজন্ম বিষয়ক কথা কি?
মুরাকামি: বাস্তবে আমরা রক্ত-মাংসে গড়া মানুষকে হত্যা করতে পারি না। কিন্তু ‘কিলিং কমেন্ডেটর’-এর মতো গল্পের মাধ্যমে মানুষ হত্যা বা খুনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। গল্পের এটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে এই গল্পটায় কমেন্ডেটরকে হত্যা করাটাই একটা ধারণা হিসেবে মূর্তিমান হয়। এটা একটা যা প্রতীকী কাজ হিসেবে বিবেচ্য।
কিয়োডো নিউজ: এ ধরনের ঘটনা কি আপনার অন্যান্য গল্পেও আছে?
মুরাকামি: আমি যখন থেকেই উপন্যাস লেখা শুরু করি, আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আমার শব্দ দিয়ে পাঠকদের শারীরিক প্রতিক্রিয়া ঘটাবো। যেমন, অনেক পাঠকই আমাকে বলেছেন যে, তারা ‘হিয়ার দ্য উইন্ড সিং’ উপন্যাস শেষ করার পর বিয়ার পান করতে চেয়েছিলেন। পাঠকের এমন প্রতিক্রিয়া পেয়ে লেখক হিসেবে আমার খুব ভালো লাগে।
কিয়োডো নিউজ: ‘নওরোজিয়ান উড’-এও কি একই রকম ঘটনা আছে?
মুরাকামি: ‘নরওয়েজিয়ান উড’-এর ক্ষেত্রে আমি রতিক্রিয়া করার সময় যে শারীরিক অনুভূতি পাওয়া যায়, তা বাস্তবিক সম্মত করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। এটার জন্য আমাকে অনেকেই অপছন্দ করেছে, এমনকি আমি অনেকের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু পাঠকের কাছে সেই অনুভূতিগুলো বাস্তবিক করাটাই আমার কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ ছাড়া আমি গল্প লিখতে পারতাম না। আমি মনে করি যে, আমার অনূদিত রেমন্ড কার্ভারের গল্পগুলো ছাড়া, এখানে খুব কম জাপানিজ উপন্যাস আছে, যা কিনা শারীরিক অনুভূতিকে বাস্তবিকভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে।
কিয়োডো নিউজ:‘কিলিং কমেন্ডেটর’-এ ছুরি দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত কমেন্ডেটরের রোগা শরীরকে ভেদ করতে থাকে যতক্ষণ না সেটা তার পিষ্ঠদেশে ভেদ করতে দেখা না যায়। তার সাদা কাপড় এবং নায়কের হাত সম্পূর্ণ রক্তে ভেজা ছিল।
মুরাকামি: আমি মনে করি, গল্পের মাধমে ছুরি ধরার শারীরিক অনুভূতি, একটা মানুষকে ছুরিকাঘাত করা এবং রক্তের ছিটা মুখে পড়ার অনুভূতি পাঠকদের কেবল উদ্দীপনা যোগায়। বাস্তবিক বিষয়গুলোর বর্ণনার মাধ্যমে কিছু ঘটনাকে জীবন্ত করে তোলা যায়।
কিয়োডো নিউজ: উপন্যাসের নায়ক একজন চিত্রশিল্পী যে কিনা তৈলচিত্র আঁকে।
মুরাকামি: আমি কখনো তৈলচিত্র আঁকিনি। আমি কেবল পেইন্টিং সম্পর্কিত কিছু বই পড়ে উপন্যাসটি লিখেছি। উপন্যাসে ছবি আঁকার বর্ণনা নিয়ে আমি চিত্রশিল্পীদের প্রশ্ন করেছিলাম। তারা কোনো ভুল খুঁজে পাননি। আমি মনে করি, শূন্য থেকে কোনো কিছু সৃষ্টি করার শক্তি পেইন্টিং ও গল্প এই দুটোতেই আছে।
কিয়োডো নিউজ: গল্পের নায়ক যে বাড়িতে বাস করতো, যা এক সময় জাপানের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী তোমোহিকো আমাদার ছিলো। তিনি যখন ভিয়েনায় পড়তেন, তখন নাৎসি বাহিনি কর্তৃক অস্ট্রিয়া জার্মানীর অংশ হয়েছিল। প্রায় একই সময়ে আমাদার ছোট ভাই সুঘুহিকো, নানজিং পতনের কারণে শুরু হওয়া দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিল। দুটো অভিজ্ঞতাই উপন্যাসে লেখা হয়েছে।
মুরাকামি: নায়ক যেখানে বাস করে, সেখান থেকে যখন কমেন্ডেটরকে কবর থেকে তোলা হল ঠিক সেই সময় থেকে গল্পের প্লট এগিয়ে যেতে থাকে। এই গল্পটাই হচ্ছে অতীতকে খোঁড়া এবং পুনরায় জীবন দেওয়া।
কিয়োডো নিউজ: আপনি বলেছিলেন যে, কমেন্ডেটর হলো অতীতের কোনো বার্তাবাহক।
মুরাকামি: আপনি কোনো কিছু ঢাকার জন্য যত গভীর করে গর্ত খোদাই করুন না কেনো, একটা সময় সেটা গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। আমরা ইতিহাসের উপর ভর করে বেঁচে আছি। আমরা ইতিহাস ঢাকতে যত চেষ্টা করি না, কারণ তা একদিন প্রকাশ পায়। আমি মনে করি, ইতিহাস হচ্ছে কতগুলো স্মৃতির সমষ্টি যার ভার আমাদের বহন করতে হয়।
কিয়োডো নিউজ: আপনি উনিশ শ’ উনপঞ্চাশ সালে যুদ্ধের পর জন্মগ্রহণ করেছেন।
মুরাকামি: আমি যখন জন্মগ্রহণ করেছিলাম, তখন মানুষের মনে নিজেদের মধ্যে খুন-খারাবি করার স্মৃতি কম আসতো। আমি এখনও খুব ভালো করে বলতে পারি যে, যুদ্ধটা খুব দ্রুত আমাদের মন থেকে চলে যায়নি। এখনো মানুষ ভাবে যে, তারা কঠিন মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একটা সময় তারা দেখবে যে তাদের পায়ের নিচে আসলে কাদামাটি আছে।
কিয়োডো নিউজ: আপনি কি মনে করেন, যুদ্ধের সময় মানুষের মধ্যে যে খুন-খারাপির মানসিকতা ছিল, তা বর্তমান সমাজেও বিরাজ করছে?
মুরাকামি: আমি মনে করি, আমাদের মনের গভীরে অনেক বিচিত্র প্রাণী নীরবে নিভৃতে বাস করছে। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আমার লেখায় তা উঠে আসে। আমাদের নিত্য জীবনে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য অনেকেই উৎসাহী হয়ে থাকে। আমাদের মনের খুব গভীরে হিংস্রতা উঁকি দিয়ে দেখে। মাঝে মাঝে আমি ভয় পাই যে, অতীতের কোনো বিষয় হয়তো মানুষের জীবনে ফিরে আসছে।
কিয়োডো নিউজ: এ ধরনের সমাজে একজন লেখকের ভূমিকা কেমন হবে?
মুরাকামি: লেখকরা স্বাধীনভাবে আমাদের গল্পগুলো সৃষ্টি করে থাকি। কিন্তু সেই স্বাধীনতার মধ্যে স্বাভাবিক নীতিশাস্ত্রের মূল কথাগুলো বজায় থাকবে। উপন্যাসিকদের একটি দায়বদ্ধতা আছে। খারাপের বর্ণনা যতই বিদঘুটে হোক না কেনো, উপন্যাসিকরা যেই ধারণা প্রদান করবেন সেটার মৌলিক মান থাকবে।
কিয়োডো নিউজ: টোকিও সাবওয়েতে সিরিন গ্যাস আক্রমণে ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড: দ্য টোকিও গ্যাস অ্যাটাক অ্যান্ড দ্য জাপানিজ সাইকি’ বইটি লিখেছেন। এই কুকর্মটি ওমু শিরিনকিও কাল্টের মাধ্যমে হয়েছে।
মুরাকামি: আমি যখন এটা লিখছিলাম, তখন আমি ভেবেছিলাম যে, উপন্যাসিক হিসেবে আমি একটি গল্প তৈরি করব। যেন শোকো আসহারা যে ওমু শিরিনকিওর নেতা। তার অনুসারীদের যার কথা বলেছিল, তাকে যেন আমি হারাতে পারি। ওই সময়ে ওমু সক্রিয় ছিল আর ধর্মও খুব শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন আমি মনে করি যে, ধর্মের থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ক্ষমতা অনেক বেশি। এখানে আদর্শ এবং ধারণাগুলো সরাসরি ছড়ানো যায়। আমি বলছি না যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খারাপ, কিন্তু আমরা অবশ্যই ভুলে যাবো না যে, ওমুর মতো এরকম অশক্তি এখনও বিদ্যমান আছে।
কিয়োডো নিউজ: তাহলে কি আপনি মনে করেন, কিলিং কমেন্ডেটর এমনই একটি গল্প, যেখানে এমন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলা হয়েছে?
মুরাকামি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেসব আক্রমণ দেখা যায়, তা আসলে খণ্ড খণ্ড রূপে আমরা দেখতে পাই। এদের একে অন্যের সঙ্গে কোনো যোগযোগ নেই। আমি নিজে মনে করি, গল্পগুলোতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর মূল্য থাকতে হবে।
কিয়োডো নিউজ: তাহলে এটাই কি গল্পের শক্তি?
মুরাকামি: আমি মনে করি, উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষ আসল অভিজ্ঞতার মধ্যে যেতে পারবে। এই পৃথিবী কেমন হবে? এটা আসলে উপন্যাস পড়ার মাধমে তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং দর্শনের ওপর নির্ভর করে। আমি এমনসব গল্প লিখবো, যা কিনা হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করবে। উপন্যাস যে ক্ষমতা রাখে তার ওপর আমার অনেক আশা আছে।
কিয়োডো নিউজ: ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ উপন্যাসে ওয়াটারু মেনসেকি নামে এক রহস্যময়ী ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর আবির্ভাব হয়। তার নামের অর্থ হলো ‘রঙ এড়ানো’, তাই অনেকের কাছে ‘কালারলেস সুকুরু আজাকি অ্যান্ড হিজ ইয়ারস অব পিলগ্রিমেজ’-এর গল্প মনে পড়ে যায়।
মুরাকামি: হ্যাঁ, তা ঠিক এবং আমি সেটা বুঝতেও পারিনি। স্কট ফিটজেরাল্ডের ‘দ্য গ্রেট গেটসবি’র গেটসবিকে সম্মান দেখানোর জন্য মিনশিকি চরিত্রটি এনেছি।
কিয়োডো নিউজ: গেটসবি এমন একটি জায়গায় বাস করে যেখানে সে তার ভালোবাসা মেয়ে ডেইজির বাসা দেখতে পায়। একইভাবে মিনশেকি ওদাওয়ারা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত পাহাড়ের ওপর একটি ম্যানশনে বাস করে। সম্ভবত তার কন্যা মারিয়া যে বাসায় থাকে সেটা সে তার ম্যানশন থেকে দেখতে পায়।
মুরাকামি: ধনীদের ধনাঢ্য জীবন গেটসবিকে আকৃষ্ট করেছিল বলে সে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে তার লক্ষ্যে পৌঁছেছে। উল্টো দিকে মেনসেকি সব সময়ই সাধারণ জীবন যাপন করতো। তাই তাদের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমি গেটসবি থেকে কেবল পরিবেশটা নিয়েছি।
কিয়োডো নিউজ: তার একটি প্রতিকৃতি অঙ্কনের জন্য মেনসিকি নায়কের কাছে এসেছিল। সে বলেছে যে, তার প্রতিকৃতি আঁকাটা হলো একটি ‘বিনিময়’। নিজেদের মধ্যে অংশ বিনিময়। গল্পের নায়ক তার মৃত বোন কোমিচির সঙ্গে বিনিময় করলো, আর মারিয়াও এমন মিথস্ক্রিয়া অনুভব করেছিল। ‘বিনিময়’ শব্দটা দারুণ প্রভাব ফেলেছে।
মুরাকামি: যেহেতু এই গল্পে সীমিত সংখ্যক চরিত্র আছে, তাই এদের মধ্যে আদান-প্রদানের সম্পর্ক না হলে গল্পটা তেমন একটা জমতো না। মেনসেকি হলো প্রথম ব্যক্তি যে কি না, প্রথম গর্ত করেছিল। তা না হলে প্রথম দিকেই গল্প হতো না।
কিয়োডো নিউজ: তা ঠিক, মেনসেকি হলো প্রথম ব্যক্তি যে না লেবারদের ডেকে এনে খোদাই করেছে।
মুরাকামি: এই যুক্তিতে বলা যায় যে, এই গল্পের যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে। আমার আগের উপন্যাসগুলোতে চরিত্রদের মধ্যে তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। সেগুলো দুটি ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ককে পুঁজি করে লেখা হয়েছিল। চরিত্রগুলোর মধ্যে তেমন কোনো মিথস্ক্রিয়া ছিল, এমনকি কিছু চরিত্রেরও নাম নেই। তাই আমি যত লিখেছি, তাতে অনেক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে লিখতে পেরেছি। ‘কালারলেস সুকুরু আজাকি অ্যান্ড হিজ ইয়ারস অব পিলগ্রিমেজ’-এ বহু ব্যক্তির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া দেখতে পারবেন।
কিয়োডো নিউজ: কিলিং কমেন্ডেটর’-এ খুব কম চরিত্র আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল বলে চরিত্রায়ণ করা সম্ভব হয়েছে।
মুরাকামি: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক যে, নিজের কিছু না কিছু একটা আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ একে অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ উপন্যাসের আগে আমার যেসব উপন্যাস ছিল, সেগুলোতে যোগাযোগের কাজটি এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ‘নরওয়েজিয়ান উড’ লেখার পর আমি অনুভব করলাম যে, আমি এমন এক দুনিয়া সৃষ্টি করেছি যেখানে মানুষ যোগাযোগ ছাড়া বাঁচতে পারে না। মন্দির মসজিদ গীর্জা নয় মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেই সুরাসুর মন্দির-মসজিদ-গীর্জা নয়, মানুষের মাঝেই স্বর্গ নরক, মানুষেই সুরাসুর।
কিয়োডো নিউজ: ‘কিলিং কমেন্ডেটর’-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি উত্তম পুরুষে বর্ণিত। অনেক বছর হয়ে গেছে যে, আপনার অন্যান্য কর্মে এমনটা দেখিনি।
মুরাকামি: আমি লেখালিখি শুরু করেছিলাম উত্তম পুরুষে বর্ণনা করে। তারপর আস্তে আস্তে তৃতীয় পুরুষে বর্ণনা করা শুরু করেছি।
কিয়োডো নিউজ: আপনার উত্তম পুরুষে বর্ণিত যেসব উপন্যাস আছে তা চিত্তাকর্ষক ছিল। কিন্তু আপনার ‘আফটার দ্য কোয়াক’ বইয়ে একটি গল্প আছে সালের হানশিন ভূমিকম্পের উপর ভিত্তি করে লেখা, যেটা তৃতীয় ব্যক্তির বর্ণনায় লিখেছেন।
মুরাকামি: ‘১ কিউ ৮৪’ উপন্যাসটি অনেক বড়, যেটা তৃতীয় পুরুষে বর্ণনা করেছি। আর যখন আমি উপন্যাসটা লেখা শেষ করলাম, তখন আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, উত্তম পুরুষের বর্ণনায় আমি কী লিখতে পারবো।
কিয়োডো নিউজ: উত্তম পুরুষের বর্ণনায় যা লেখা সম্ভব, তৃতীয় পুরুষের বর্ণনায় তা কি লেখা কঠিন ছিল?
মুরাকামি: উত্তম পুরুষে স্বগতোক্তি দেওয়াটা সহজ। উত্তম পুরুষে অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বর্ণনা করা সম্ভব আর পাঠকরাও অনেক কিছুই সহজে বুঝতে পারবে। পাঠকরা এমন করলে লেখক হিসেবে আমার ভালো লাগে।
কিয়োডো নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুরাকামি: আপনাদেরও ধন্যবাদ।