ঘরে ফেরার খাতা
ফেরা কি আর হবে না কোনোকালে,
আকাশে মেঘ বিজুলি চমকালে?
কিম্বা যদি ভীষণ খরদাহে,
আগুন ঢোকে পথের খাজুরাহে।
অথবা সেই ডাইনোসর এসে,
হলকা মারে মেঘের কালো কেশে।
বন্ধ হবে ঘরে ফেরার খাতা,
শুকিয়ে যাবে গাছগাছালি ছাতা।
এই অছিলা ফেরার পথে রোজ,
দিচ্ছে বাধা রাখছি তবু খোঁজ।
আবার যদি বর্ষা আনে কাদা,
সারাটা দেশ বানের জলের সাদা।
শহরগুলো ছোট্ট বাতিঘর,
গায়ের লোক কাঁপছে থরথর।
এমন দিনে ফেরার কথা ভাবা,
স্বার্থপর বলবে লোকে-বাবা!
আবার ফেরা পিছিয়ে যাবে দিন,
বুকের ব্যথা বীণায় হবে লীন।
অপেক্ষা কি ফুরায় কোনোকালে,
যখন ফোটে শিমুল ডালে ডালে।
যখন মাছ গাবায় খালে বিলে,
চোখটাযেনো ছোঁ মেরে নেয় চিলে।
পাঠশালাতে ঐক্যতান ওঠে,
ছুটির কথা তারার দেশে ফোটে।
তখনতো আর ফেরার কথা নয়,
যে গেছে তার ফেরা কি আর হয় !
দেখবো রাঙা দু’পা
ভালোবাসার সূর্য ওঠে তোমার চোখ জুড়ে,
অন্ধকারে খাক হবে কি জীবন পুড়ে পুড়ে।
কোথায় তুমি লুকিয়ে থাকো জানতে যদি পারি,
মরুভূমির অতল থেকে তুলবো আহাজারি।
অন্যকারো হাতের রেখা তোমার করপুটে,
দেখলে কেন হৃদয় মরে বাতায় মাথা কুটে।
এখন সব অন্যদিন অন্য ঘরের কোলে,
সুখের তারা পূর্বাপর নাচছে কোলাহলে।
একটু পথ কাছের বাড়ি আসতে লাগে দেরি,
কোথাও কোনো যুদ্ধ নেই বাজছে কেন ভেরি।
কোথায় বাজে ঢোল ডগর শুড় দোলায় হাতি,
মনের বাড়ি পাতালপুর সেখানে ঝাড়বাতি।
কোথাও কোনো শান্তি নেই স্বর্গে গেলে পাবো,
অচেনা সব হুরপরীরা সেখানে সাঁতরাবো ?
চাই না কোনো ভিন্নভাষী চাই না অপরূপা,
একজীবনে তুমিই থাকো- দেখবো রাঙা দু’পা।
বিশ্বরূপা
হলঙ নদীর সাথে কপোতাক্ষ ধীরে বয়ে যায়;
তেমন আশ্চর্য নয় তবু এই দুপুরের রোদে,
সূর্যকে দুভাগ করে দাঁড়িয়েছে তমাল ছায়ায়,
মনের অনেক কথা নিভে যায় বাতাসের ক্রোধে।
স্মৃতির বিমান থেকে প্যারাসুটে নেমে আসে সেতু,
সাগরদাঁড়ির সাথে যুক্ত হয় হৃদয় প্রান্তর;
মধুর বাড়ির কেউ আমন্ত্রণ জানাবে যেহেতু-
দেখবো এখানে বসে ঘুঘুদের ব্যথার প্রহর।
এতোটা বিভোর করে কোন নদী রেখেছে আমাকে,
পাঁচশো মাইল দূরে কপোতাক্ষ মুহূর্তে তাকালো-
আগামী সকাালে যাবো ডুয়ার্সের জঙ্গলের ডাকে,
বিমূর্ত বাঘের সাথে ময়ূরের মমি দেখা ভালো।
আবার দুপুর হবে গাছে গাছে বিদায়ের ডানা,
ফেরার আকুতি ঘোরে ফালাকাটা অচেনা জংশনে।
বিস্মৃতির জন্ম দিতে আর কোনো অশ্রু নেই জানা,
বিশ্বরূপা বসে আছে পৃথিবীর সব কটি কোণে।
বৃষ্টিজন্ম
বৃষ্টি দাও বৃষ্টি দাও বৃষ্টি থাকে মেঘে,
গাছ কেটেছে বলে এখন সূর্য আছে রেগে।
নদীর চোখ নিপর্তগ শেকলভরা জল,
নৌকাগুলো ছিন্নমূল হতবিহ্বল।
পাখির ডানা শুষ্ক মাঠ আগুন জ্বলে বনে,
বৃষ্টি দাও নীল ময়ূরী নাচছে তপোবনে।
শহরতলি শিক কাবাব টুকরো করা রুটি,
পাঠশালায় ঘণ্টা বাজে সারা জীবন ছুটি।
তবুও কারো মন ভালো না বৃষ্টি ছাড়া বই,
পাঠক নেই তাকিয়ে আছে বর্ণ রোদে খই।
মর্মাহত জ্ঞানী খিজির মাছের ক্ষুধা বোঝে,
মুসা হাঁটেন হাজার পথ ভরানদীর খোঁজে।
কোথায় নদী মেঘের ঠোঁটে বৃষ্টি থোকা থোকা,
লক্ষ গাছ খুন হয়েছে নেইতো লেখাজোঁকা।
বৃষ্টি দাও বৃষ্টি দাও বৃষ্টি কোথা পাবো,
আশীষ দাও বৃষ্টি হয়ে এদেশে জন্মাবো।
এক জীবনে
রোজ বিকেলে দু’চোখ মেলে খুঁজছি মাকে,
পাখির ডাকে পাতার ঠোঁটে লুকিয়ে থাকে।
ছায়ায় ঢাকা পথের ধুলো সবুজ ডানা,
সবার কাছে ব্যথার কথা বলতে মানা।
ভোরের আলো যখন আসে ঘাসের ঘরে,
ঘুম তখনো লেপ্টে আছে সাড়ম্বরে।
কাঠবেড়ালি বললো সেতো অনাদিকাল।
খুঁজছি তাকে জলেস্থলে শুধু আড়াল।
মৌমাছি খুব ব্যস্ত ছিলো বললো হেসে,
তার বাড়িতো জোছনাভরা চাঁদের দেশে।
হঠাৎ আসে সন্ধ্যেবেলা খুব সকালে,
যায় চলে সে ইচ্ছে হলে চক্রাবালে।
হারিয়ে মাকে ফেলবো নাকি হচ্ছি ভীত,
নীল পরী সে সাদা বাতাস অপ্রাকৃত।
যেখানে থাক দেখবো মাকে এক জীবনে,
বাংলাদেশের মাঠ নদীতে পলাশ বনে।