প্রকল্পের জ্যাঠা খননে ঠকায়


প্রকল্পের জ্যাঠা খননে ঠকায়
নদীর কল্লোল রুদ্র রূপ নিয়ে ছুটে
উজানে কুমির হয়ে শেয়ালের খোঁজে
কখনো চেঙ্গিস নখ ব্যর্থতায় খুঁটে
ইলিশ ডাঙার কষ্ট হাড়ে হাড়ে বোঝে।

পলল ভাগাতে নদী প্রাণান্ত চেষ্টায়
শাবল বাগিয়ে দৌড়ে গুঁড়িয়ে কিনার
থানার দারোগা দোষ চাপায় কেষ্টায়
প্যাঁচার উল্লাসে ভাঙে ধর্মের মিনার।

তবুও অনেক নদী হচ্ছে বুড়িগঙ্গা
দেশের কানুন বাঁধা লোভিদের জিভে
টক-শো কেবল আড্ডা লেগে থাকা মঙ্গা
বেরোয় বানানো শব্দ সংবাদের নিবে।

প্রকৃতি বিরূপ আজ নদীরা কঁকায়
প্রকল্পের জ্যাঠা নিত্য খননে ঠকায়।

পরাণ পাখি
পরাণ পাখির কথা কখন কে শুনে
খাঁচার ভেতর পাখি করে দাপাদাপি
বোঝে না কখনো সে তো কে সাধু কে পাপি
মানুষ আপনে মজে নিজ স্বার্থ গুণে।

মাটির শরীর মাটি হবে বিনা নুনে
পরাণ পাখির আয়ু ভুল নাতো মাপি
অন্যায় প্রাপ্তির আশে খুলে রাখি ঝাঁপি
বুঝি না অন্তর খাচ্ছে নিদারুণ ঘুণে।

পরাণ পাখিটা আসে কার ইশারায়
কার নিয়ন্ত্রণে পাখি নিত্য দিশা পায়।

মানুষ সকল জেনে থাকে উদাসীন
স্বেচ্ছাচারে ক্ষতি করে নিজ ভবিষ্যৎ
অমোঘ বিহঙ্গ দেহ ছাড়তে গুণে দিন
দুশ্চিন্তা রবে না, পথ হলে সবি সৎ।

জনমের সাথী হবো
বিদায় বলো না প্রিয় বলো আসি জান
আসি শব্দে সুপ্ত থাকে ফিরে আসা ফের
মনে আশা জেগে থাকে প্রেম পাবো ঢের
তুমি কাছে এলে দেখি নাতো বাম ডান।
কখনো ভাবি না আমি বেড়ে যাবে টান
তুমি দূরে গিয়ে মাঝে বিরহের ঘের
পাতা উল্টে দেখে নেবো প্রণয়ের জের
অডিওতে বেজে যাবে অশ্রুসিক্ত গান।

জনমের সাথী হবো এই মনোভাবে
প্রথমে তোমায় দেখি শেষ রাতে খাবে।

তুমি আমি মুখোমুখি বসে রবো শুধু
অভাব ছোঁবে না দোঁহে প্রেম রবে খোশ,
খরায় শুকিয়ে জল থাক বালি ধুধু
যেকোনো পরিস্থিতিতে হারাবো না হুঁশ।

দারিদ্র্য গলার লকেট
দেখেছি সকল কিছু আগা থেকে মূল
গাছের বাকল খেয়ে শেষে খেলো সার
আয়েশে চিবোয় বেশ দাকে ভরা গুল
নাগালের বাইরে থাকে শূয়রের ঘাড়।
উদকে ডাঙ্গায় ব্যাঙ বুদ্ধিতে শেয়াল
অলীক চোখের জলে বাড়ায় আদর
আসলে ভেতরে আছে নিরেট দেয়াল
চরিত্রে বিস্তৃত এক কামুক বাঁদর।

ক্ষোভের মশাল কোটি অন্তরে শয়ান
দেরাজে জ্বালানি নেই ফুটোও পকেট
হাতুড়ি পিটায় ব্রেনে বাবার বয়ান
দারিদ্র্য গলায় আজ হয়েছে লকেট।
পঙ্কিল চক্রের মাঝে সভ্যতা আটক
প্রান্তিক মানুষ নিত্য খাটিচ্ছে ফাটক।

রাজা হলুদ কুমার
হলুদ কুমার নামে রাজা পিন্দে সাদা
কাপড়; শাসন দেখে নেই প্রজাকূলে
রতি ক্ষোভ কিংবা কষ্ট। মাঝেমধ্যে ফুলে
নাক ঠেকায় হরিষে; মুখে থাকে আদা।
হলুদ পাখির ডাকে কুমোরেরা কাদা
তুলে হাতে; রমণীরা ফিতে বেঁধে চুলে
শুরু করে নৃত্য; তৃপ্ত মহারাজা গুলে
ডুবোয় নাসিকা; থাকে না খুশির বাঁধা।

বৈষম্য বিলোপে রাজা দেখিয়েছে শান
তাতে প্রজাদের বেশ বেড়ে গেছে মান।

প্রজা রাজা পাশাপাশি, কেউ নয় দাদা
কোনো ক্ষমতার; এক রকমের উলে
বুনা শীতের কাপড়;আছে গাদা গাদা
সম্পদ; সবার খুব ভোরে দোর খুলে।

যৈবতী কন্যার মন
ভর দুপুরে কে ডাকে কদম তলায়
যৈবতী কন্যার মন সমুদ্রের ঢেউ
নিষেধের বাঁধ ভেঙে যেতে বলে কেউ
ছটফটে হরিণী মন চৈত্রের খলায়।
বসন্ত কোকিলা এক খোঁচায় গলায়
দুয়ারে কুকুর বসে ডাকে ঘেউ ঘেউ
বিন্দাস ভাগিয়ে দিতো হতো যদি ফেউ!
কাছে পেতাম মিনসেকে ছলায় কলায়।

বেজে যায় অনিবার ডাকাতের ঢাক
মন চুরি হয়ে গেলে ক্ষতি নেই, যাক!

নিশিথে প্যাঁচার ডাকে ঘুম থেকে জেগে
চুপি চুপি বের হয়ে যাবে ঘর থেকে
বসে কি রবে না কৃষ্ণ দারুণ আবেগে
টুক করে চুমু খেয়ে দেবে প্রেম এঁকে।

নদীগুলো নিস্তরঙ্গ
নদীগুলো ছেঁড়া তার হয়ে নিস্তরঙ্গ
সূর্যের কিরণে ত্যাজ এক দানবের
নগরের চিলেকোঠা খাঁচা মানবের
কুলুঙ্গির জরায়ুতে ঐতিহ্যের রঙ্গ।
ঘাসের ডগায় চন্দ্রে ঘটে স্বপ্নভঙ্গ
গাছের ক্ষুধায় জল শুকায় টবের
দূর্গন্ধ মিশেছে গায়ে জীবন্ত শবের
সা রে গা’র প্রিয় খুব তবলের সঙ্গ।

নগ্নতা জৌলুশে বোম্বে অর্থনীতি তোড়ে
আপন সংস্কৃতি আজ চলে যাচ্ছে গোড়ে।

আর কী! দূষণে জব্দ সভ্যতার নাড়ি
পালকের পেন্ডুলামে দোলে নাসারন্ধ্র
জাদুঘরে ঝিমুনিতে মৃত্তিকার হাঁড়ি
চন্দ্রালোক ধোঁয়াব্যুহে হয়ে আছে মন্দ্র।

কাছিমের পিঠে সময়ের চাকা
কাছিমের পিঠে থেকে সময়ের চাকা
নিজস্ব নিয়মে চলে থোড়াই পরোয়া
গতির চরিত্র রয়েসয়ে যায় আঁকা
সুক্ষ্ণতম বিবর্তন থাকে না ঘরোয়া।
প্রকৃতির কৌটা ঘরে জন্মে চানাচুর
মাটির গা ছেড়ে দম ইস্পাত কায়ায়
ঘষা খেয়ে বহু ভোঁতা হতে আছে ক্ষুর
স্থানান্তর হচ্ছে প্রাণ প্রত্যেহ ছায়ায়।

শুকিয়েছে নদী ঢের সমুদ্রে উচ্ছ্বাস
বায়ুগর্ভে বাড়ে সীসা আকাশে ভবন
স্বস্তির নিঃশ্বাস উবে বহিছে লু শ্বাস
মিঠে কমে বাড়ে ক্রমে জলের লবন।
নিয়মের ঘেরাটোপে বদ্লায় নিসর্গ
কিঞ্চিৎ ব্যত্যয় ঘটে উঠালে বিসর্গ।

অনাসৃষ্টি পাখি
দেহের ভেতর আছে অনাসৃষ্টি পাখি
জানে না কেউ কখন যাবে দেহ ছেড়ে
পাখি কেমন আকারে ছোট নাকি ধেড়ে
কল্পনায় এঁকে তাকে কত রং মাখি।
অদৃশ্য খাঁচায় ওকে যত্ন করে রাখি
কখনো গায় না গান মিষ্টি কিংবা হেঁড়ে
ভাগাতে যাই না কভু ওর দিকে তেড়ে
পাখির যাবার ভয় তবু নিত্য চাখি।

চলে গেলে হবে কী যে জানে সর্বজন
দেহের ভেতরে থাক্ চাচ্ছে সদা মন।

চলে যাবার সময় গুণে অহোরাত্র
লোভের উর্ধে থাকিয়া দেহে করে বাস
শাসন প্রভুর হাতে দেহ মাটি মাত্র
ফুড়ুৎ হবেই পাখি সাঙ্গ হলে শ্বাস।

কবিতা আমার
কবিতা আমার নয় পাথরের চাঁই
অগাধ বরফে ঢাকা মেরু প্রান্ত দুই
কিংবা জ্বরের রোগীর জন্য মোটা সুঁই
হরিণের গায়ে কোনো বল্লমের ঘাই।
কবিতা আমার না তো খড় পোড়া ছাই
মঙ্গল গ্রহের ছেঁড়া বালিশের রুই
ক্ষুধার্থের পাতে দেয়া পঁচে থাকা পুঁই
কিংবা বিছানায় ছেড়ে দেয়া শত ডাঁই।

কবিতা আমার জল নয় একেবারে
মামার হাতের মোয়া নয় একনাগাড়ে।

কবিতা আমার মধু জাতকের মুখে
শীতের সকালে রস খেজুরের গ্লাস
নিদ্রা বাসর রাতের অনাবিল সুখে
অনিবার কৃষ্ণপক্ষে আলোকের ফ্লাশ।