ক .জেলের ভয়
গ্রাম ও দলাদলির অজানা আতঙ্ক থেকে
কাঁপাগলা গ্রাস করে রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর
একটানা ঝিঝি পোকা শব্দের ভেতর ভর
. করে আছে
মানুষের ভেতর অবলুপ্ত ভৌতিক আবহ।
ঘুমের অভিনয়ে পাশ ফিরে শুতে গেলে
খাটের কড়কড়ে শব্দ থেকে জন্ম নেয়
জলের বুক চিড়ে যাওয়া নৌকা
. পাটাতনের গতি
যেন বাতাসের প্রতিকূল হাওয়া পালে লেগে
কেউ একজন জীবন থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে যায়
নিজের বসত ঘর চার দেয়ালের মতো ছোট হয়ে
ঘর হয়ে ওঠে জেলের মন সংস্করণ -জেলের ভুবন।
খ. জেল ও পলায়নপর মানুষ
নিশুতি রাতে নিমপাখির ভয়ার্ত কণ্ঠ চুরি করে
কেউ একজন অনুচ্চ স্বরে নাম ধরে ডাকে।
সেই ধ্বনি আধো সাহসের ভেতর তলিয়ে যাবে বলে
শীত রাতে শরীর ঘেমে আর্দ্র বেদনায় কেঁপে ওঠে।
সতর্ক ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে বনাঞ্চলে,ক্ষেতের ভেতর
কালভার্টের নোংরা নালায়,চামড়ায় কাটার আঁচড়
যেনো গোপন গেরিলার মতো কোনো সংকেত বার্তা
বন্ধুর হাতে পৌঁছে দিবে বিমূর্ত নকশার স্মৃতি।
আজও সদাশয় মানুষ রাতে বন্ধ দরোজার কড়া
. নেড়ে
পুলিশ ও জেলের দুঃসহ স্মৃতির কথা ভেবে
কেঁপে ওঠে – নাম ধরে ডাকে সে অনুচ্চ স্বরে।
গ. জেল পাখির আর্তি
নিঃসঙ্গ তালগাছের মতো উঁচু জেলপ্রাচীর
দাঁড়িয়ে থাকে নির্মোহ আলস্যের ভঙ্গি
শুধু ঘন্টার ধাতব ধ্বনি ক্রমশ ক্ষীণ হতে হতে
. মিলিয়ে যায় হাওয়ায়।
কেঁপে ওঠে প্রাচীন গাছের দোলায়িত শাখা
আর একটি পাখি বেসুরো গাছ গেয়ে
ডাল থেকে ডালে উড়ে যাবার কালে
মানুষের বন্দীদশা দেখে তামাশায় মেতে ওঠে
তার ডানার বিলোড়ন চোখের নীরব ভাষায়
লেখা থাকে আর্দ্র করুণা, ক্যানারীর ইতিহাস
মানুষের কিছু আর্তি পাখির উপহাস।
ঘ .জেলের বকুল রাত
আজও বেঁচে থাকার অবসরে নিশ্চুপ মুহূর্ত
সন্ধ্যায় ফিরে আসে বৃষ্টি ভেজা বকুল
বাতাসে উড়ে ব্যাকুল নীল খাম।
দূরে কোথাও বয়ে যায় গন্ধ মাদকতা
কেঁপে ওঠে হারিকেনের নিভু শিখা
তোমার জানালায় হাসনাহেনার মুগ্ধ ঘোর।
আজও বৃষ্টিভেজা বকুল সন্ধ্যা
কাতর গন্ধ মাদকতা থেকে
অসংলগ্ন ক্লান্তি এসে ভর করে।
বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় আতরের ঘ্রাণে মৃত্যু আবহ
হয়তো তোমাকে ফিরিয়ে দিবে স্মৃতির মায়া
হয়তো তুমিই পাবে অক্ষরশূন্য সাদা চিঠি
জেলে বকুল রাত কালো কাপড়ে ঢেকে গেলে
ঙ. জেলে বখরাবাজি
খিস্তি খেউড়, ভ্যাপসা তিব্র গন্ধ ঝাঁঝে
মানুষ বহন করে কটু প্রস্রাবের জীবন
জেলে এমনই সাবলীল রঙ ও বখরাবাজী।
তার ভেতর সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলি
গোল হয়ে ভাসে শূন্যে, মিলে হাওয়ায়।
ভাতের মোটাদানা পথের কাঁকড় কিলবিল
ক্ষুধা ও তৃষ্ণা এভাবে নিবারণ করে প্রতিদিন।
ঘুমে সে দয়িতার নগ্ন শরীর খুঁজে
বেজন্মা গালি শুনে সব সয়ে যায় তাঁর।
ঝিনুক বালির রসায়নে মানুষ মেলে ধরে
মনের ভেতর লুকানো সাতরাজার গুপ্তধন
স্মৃতির ভেতর তেতে ওঠা বিষন্ন দুপুরের কৈশোর।
পাপ আত্মশুদ্ধি ও জিঘাংসার প্ররোচনা পেয়ে
চিরকাল বিষাদগ্রস্ত বিনম্র ভঙ্গির মতো নিঃসঙ্গ
. দাঁড়িয়ে থাকে নির্বিকার জেলখানা।