জাদুকরের খেলা
কোর্টস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি— শ্যামবর্ণ কিশোরী ডাকছে দূরে,
যেতে হবে মায়াবী ছায়ায়।
জাদুকরের যাদুতে সব ভুলে থাকি।
মাথামুণ্ড খণ্ডবিখণ্ড শরীর থেকে শরীর—ঝাপসা তখন।
লোকটি ভীষণখেলা খেলছে আমাকে
. —কিশোরী কোথায়!
চারিদিকে অন্ধকার—ঘামছে শরীর—
মাথার ভেতর কাঁপে খণ্ডিত মস্তক,
আমি কি দাঁড়িয়ে আছি? না দৌঁড়াচ্ছি কত দূর বাসা!
রাজু আহমেদের বাড়িটা তো এখানেই কোনো একটা গলিতে!
লেখক শহীদ আশরাফও তো আশেপাশে থাকতেন!
কখন দাঁড়িয়ে আছি— জাদুকরের রক্তাক্ত শরীরটা আর নেই
জাদুকরও তো নেই—মগ্নতায় বেজে ওঠে দুরন্ত ট্রেনের হুইসেল
কোথায় যে যাবো ভুলে গেছি জাদুকরের খেলায়;
ঝড়োবাতাসে হঠাৎ উড়ে আসে মায়াবি ওড়না।
আমাকে জড়িয়ে নেয়—গৌরিকা আবেগে তার আরাধ্য সুঘ্রাণ,
জাদুকর চলে যায়—ট্রেন চলে যায়।
. —পড়ে থাকে মনের কঙ্কাল।
প্রিয় সন্তান, তোমাকে বলছি
প্রিয় সন্তান আমার, তোমাকে বলছি, তুমি যা ইচ্ছে তা করতে পারো না
তোমার নিজের আছে কঠিন দায়িত্ব
. —তুমি একা নও।
মায়ের দু’চোখ আর বুকভরা ভালোবাসা আছে
বাবার হাড়খাটুনি শ্রম ও প্রার্থনা আছে
ভাই-বোনের নদীর মতো স্বপ্ন আছে
আঁকাবাঁকা গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী ঘামে
সবুজ স্বপ্নের ফ্রেমে বাঁধা ভবিষ্যৎ-নকশিতে তোমার মুখশ্রী।
প্রিয় সন্তান আমার, তোমাকে বলছি, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন
মুক্তিযুদ্ধ তোমার নিশ্বাসে
তোমার রক্তধারায়; শহীদের আত্মদান বোনের সম্ভ্রম
সেই সব ইতিহাস আর্তনাদ—ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল
হিসাবের খাতায় তোমার নাম—
যা ইচ্ছে তা করতে পারো না প্রিয়তম সন্তান আমার।
ভোরের নরম রোদে আঁকে তোমার উজ্জ্বল ছবি
তোমার পবিত্র মুখ বুকে ভরে স্বপ্ন দেখে স্বপ্নের সাধক
তুমি একা নও—
রক্তস্নাত সবুজ একটি বাংলাদেশ
গভীর প্রত্যাশা নিয়ে রয়েছে তাকিয়ে
. —তোমার দিকেই;
তুমি তাকে দাঁড় করাবে এ-পৃথিবীর মঞ্চে গর্বে ও গৌরবে
সেই দায়িত্ব তোমার।
প্রিয় সন্তান আমার, তোমার অনেক দায় আছে,
হিসাবের খাতাভরা তোমাদের নামে—সুন্দর বাংলাদেশ।
কেউ কেউ খসে যায়
কেউ কেউ খসে যেতে থাকে—খসে যায়
পলেস্তরার মতোন; বুঝতে পারে না
মনে করে, ‘আছি বেশ
আমি আমার রাজত্বে’
রাজত্ব যে খসে যায়
রাজত্ব যে ভেঙে যায়।
তরল আগুন
একদিন সেও থামে,
নদীও।
তুমি খসে যাচ্ছ
তুমি নিভে যাচ্ছ
সে তোমারই বৈরী ছন্দে।
কেউ কেউ খসে যেতে থাকে
কেউ কেউ খসে যায়।