‘আল মাহমুদের সাহিত্যকর্ম ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়’


বাংলা কবিতায় লোকজ ও গ্রামীণ শব্দের বুননশিল্পী কবি আল মাহমুদ এক মহিমান্বিত ঐশ্বর্যের মিনার তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডস্থ বাংলাদেশি সাহিত্যিকরা। তারা বলেন, ‘কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলা কবিতাকে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে নিয়ে এসেছেন তিনি। আমাদের কবিতায় যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার ঊণ্মেষ ঘটেছে তিনিই তার নায়ক। বিশ্ববরেণ্যরা যাতে আল মাহমুদের সাহিত্যের গভীরে যেতে পারেন সে জন্য ইংরেজি ভাষায় আল মাহমুদকে তুলে ধরতে হবে। বিশ্বময় ব্যাপকভাবে ছড়িযে দিতে হবে তাঁর সাহিত্য সম্ভার।’আল মাহমুদের ৮৮তম জন্মদিন উলক্ষে লন্ডনে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই ২০২৪) ‘‘আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন ও ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স’’ আয়োজিত আলোচনা ও কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স লিমিটেডের সিনিয়র পার্টনার ও প্রিন্সিপাল সলিসিটর ব্যারিস্টার মোঃ আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কবি আল মাহমুদের বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার (জবস্, এন্টারপ্রাইজ, স্কিলস্ অ্যান্ড গ্রোথ) ব্যারিস্টার মুসতাক আহমদ, সলিসিটর মামুন আহসানুল মজিদ, ব্যারিস্টার আরিফুল কবির চৌধুরী, ব্যারিস্টার মো. ফয়সাল জামিল, লিগ্যাল কনসালটেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল, ব্যারিস্টার ইত্তেহাদুল ইসলাম প্রমুখ।

ইস্ট লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় ল’ম্যাটিক কার্যালয়ে জন্মদিন অনুষ্ঠানে কবি আল মাহমুদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকে। আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন লিগ্যাল কনসালটেন্ট সাঈদ হাসান, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর সালাহ উদ্দিন (সুমন), ব্যারিস্টার আবু সুহেল, ইন্টারপ্রেটার ফজলে রাব্বী, একাউন্টেন্ট মাহদী হাসান, মোস্তফা জামিল, খায়রুল ইসলাম, অনিক ইসলাম, মাহফুজ আহমদ প্রমুখ। আল মাহমুদকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ১১ জুলাই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও কথা সাহিত্যিক আল মাহমুদের জন্মদিন। অসংখ্য কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা আল মাহমুদ। বাংলা কবিতাকে তিনি গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। আমাদের কবিতায় যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার ঊণ্মেষ ঘটেছে তিনিই তার অগ্রনায়ক। দুই বাংলার অপরাজেয় এই কবির লেখা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। দেশ-বিদেশে তাঁকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। চল্লিশের বেশী কাব্যগ্রন্থ, বিশের অধিক উপন্যাস এবং দশটির মতো গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার শিশু সাহিত্য কিংবা কিশোর কবিতা বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। আট খণ্ডের রচনা সমগ্রও পাঠকের হৃদয় ছুঁয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং আল মাহমুদ এক ও অভিন্ন।

আল মাহমুদের এই রচনা সম্ভার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার প্রত্যয়ে কাজ করছে আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন। ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানে লেখক ও গবেষকদের মাঝে আল মাহমুদের বই বিতরণ, আল মাহমুদের কবিতা আবৃতি-সহ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করা, কবির সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে বৃটিশ লাইব্রেরি-সহ ইউরোপের সর্বত্র পৌছে দেয়ার প্রয়াস অব্যাহত আছে।

অনুষ্ঠানে একজন ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আল মাহমুদকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। সেই সাথে বক্তারা ১১ জুলাই আল মাহমুদের জন্মদিনকে বাংলা কবিতা দিবস ঘোষণার দাবি জানান।