মরুতৃষ্ণার গান
কামুক সন্ধ্যায় কেন মরে চাঁদ-তারা?
প্রেমের আকাশে ওড়ে শৈশবের মিটিমিটি জোনাকির ঝাঁক!
মাইল মাইল রাত পার হয় তখনো মানুষ
রাত পার হলে নদী,নদীর পাড়েই জেগে থাকে নীল ভোর
বেজন্মা সে নীল নদী—নামধামহীন
কালো অক্ষরের প্রেমে পড়ে তবু স্রোতভাঙা ঢেউ
বেশুমার বিরহের তাপে পুড়ে গেলে
তৃষ্ণার চৈত্ররা গায় বাউলসঙ্গীত?
অথবা কালো কোকিল?
. ভীষণ কামুক!
পাতার আড়ালে থাকা মানবীর কামনার ভাষা পড়ে
বুঝে নেয় খুব দ্রুত
. এই বসন্তের কালে পোড়ে কার বিরহী হৃদয়!
এও কি সঙ্গত নয়? অথবা বর্ষার ধারাপাতে
ভেসে গেলে জোনাক-জোনাক
এই সব রাত আর সন্ধ্যার আন্ধার
কদম তলায় ফোটে কার ঠোঁটে কামনার হাসি—
কার হৃদয়ে জোয়ার আসে ঢেউ-ঢেউ?
যৌবনে মৌবনে যারা খোঁজে
সহস্র দিনের পাপ—অথবা কামের নামে কালো অপবাদ
দেয় যারা—
তাদের রাত্রির ঘুম, ভোরের স্বপন চুরি হয়
কর্কশ কাকের স্বরে ঘুম ভাঙে প্রতিটি দিনের
সড়কে মড়ক লাগে করুণ মৃত্যুর,
মধ্যরাত কিংবা
জনশূন্য কর্কশ দুপুরে
মৈথুনে ব্যস্ত যুবক—স্বপ্ন দেখে মাধুরী দিক্ষিত
অথবা হালের ঐশ্বরিয়া
কিংবা সানি লিয়ন—ম্যাডোনার বিষম মোচড়!
দেয়ালের টিকটিকি সাক্ষী—
এইসব যুবকের ব্যর্থ প্রেম-কামনার ইতিহাসে
কোনো নারী কোনোকালে ভুলেও কাঁদেনি।
তবু এই যুবকেরা ভালোবেসে—
নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনে তারাজ্বলা রাতে।
আহা আজ সন্ধ্যা থেকে প্রবল তৃষ্ণায় যেন পৃথিবীটা মরু!
মঙ্গলবারবিষয়ক
লিখেছি অনন্ত ঘুম—লোকে বলে কামনার ভাষা
আকালে ঘুমালে মেঘ বাতাসেরা পাখি হতে চায়
চতুর রমণী হাসে—প্রেমিকের বিরহ দিবসে
একটি শালিখ তবু অকারণে ডানা ঝাপটায়!
এসেছে মঙ্গলবার—পালিয়েছে কামনার রূপ
হৃদয়ে হৃদয় কাঁদে—পুড়ে ছাই বেদনার ধূপ।
বাবা
বাবা তো ক্রন্দনরত পাহাড়ের নাম
আদিপাপ মোছনের দায় নিয়ে কাঁধে
চিরকাল পরে যান দাসত্ব শৃঙ্খল।
চোখে তার সন্ত্রস্ত আকাশ
বুকে তবু ধরা থাকে বিপুল সাহস।
বাবা তো ক্রন্দনরত আকাশের নাম
শরশয্যায় শায়িত, তবু দেখে আশা
মেঘের মেয়ের সঙ্গে মিতালি পাতায়
বজ্রের আঘাতে হাসে চোখের সীমানা।
বাবা তো ক্রন্দনরত সাগরের নাম
একবার ডাক দিলে দখিনা বাতাসে
কেঁপে ওঠে বঙ্গোপসাগর
পৃথিবীতে নেমে আসে নুহের প্লাবন।
চিরকাল ঠকে যাওয়া কোমল হৃদয়
অথচ সন্তান জানে, ‘বাবারা কঠিন
বাবারা করেন শুধু নিঠুর শাসন।’
বাবা যে মেঘের ছায়া রোদ্দুরে দুপুরে
জানেন পরমেশ্বর, জানে মহাকাল।
বটতলা
এই বটতলা দিয়ে মেঠোপথ ধরে চলে গেছে
কত না পথিক
আমাদের শৈশবের ভোরের হাওয়া, বিকেলের
পড়ন্ত বেলার ঘরমুখো সব দুরন্ত বালক
সেইসব লাল নীল দিনগুলো, উত্তপ্ত দুপুর
সেই ছায়াঢাকা পথে আমরা কজন
ডাংগুলি-গোল্লাছুট অথবা উড়ন্ত
ঘুড়ির সুতো কাটার মতো দিনমান
বনে ও বাদাড়ে ঘুরে বিপন্ন সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা…
আসাদ অথবা ধনু কাকা, সাইফুল
অথবা খলিল কত কত পথ হেঁটে
মাইল মাইল রাত শেষে শান্ত ভোরে
দোয়েলের শিষ দেওয়া হাওয়ায় হাওয়ায়
ভেসে আসা ঘ্রাণ মেখে গায়ে কত বার
ছুটে ছুটে গেছি কিশোরীর ঢেউ ঢেউ
চুলের বেণীর মতো মেঘনার বুকে
আহা চৌরাস্তার মোড়ে, আহা স্কুলের মাঠ
অথবা পুবের ঘন ঘুমন্ত জঙ্গলে
অথবা মুন্সীর হাট, অথবা খেলার মাঠ ছেড়ে
ধানক্ষেতে ফড়িঙের পিছু পিছু দুরন্ত শৈশবে
আজ দুপুর রাত্রির মতো জীবনের মাঝপথে
মনে পড়ে সেইসব দিন!
ভালো আছ বটতলা, ভালো আছ ভীরু মেঠোপথ?
ছাগল-ছাগল
ছাগলকাণ্ডে পাগল জাতি
কাঁপছে সারাক্ষণ
এক ছাগলে করলো বিনাশ
দুই কুবেরের ধন।
‘মূর্খ’ বলে লোককে লোকে
‘ছাগল’ গালি দেয়
এখন দেখো সেই ছাগলে
প্রতিশোধও নেয়।
ছাগল মানেই মূর্খ নয় কো
নয় কো শুধু বোকা
মানুষ এখন নিজেই ছাগল
নিজেকেই দেয় ধোঁকা।
তাই তো ছাগল ধরলো এবার
ধনকুবেরের ‘ছাও’
ছাগল-ছাগল বলো যারা
তারা দেখে যাও।