মাধবীলতার প্রেতাত্মা


মাধবীলতার প্রেতাত্মা
শারদ প্রভাতবেলায় শিউলি গাছের তলে ফুল কুড়ানোর ছলে
প্রতিদিন দেখা হতো মাধবীর সাথে। আমি তাকে
মাধবীলতা বলে ডাকতাম, শিউলি তলায় তার অভিসারে থাকতাম।
বলতো সে, ‘মাধবী ডাকো ভালো কথা
তার সাথে আবার লতা মিলাতে যাও কেন? আমি কি তবে
লতার মতোই দেখতে!’

আসলে সে ছিল ঠিক লতারই মতোন
চিক্কন চাক্কন গায়ের গড়ন, রঙটা ছিলো স্বর্ণলতার মতো
উজ্জ্বল সোনালি, স্বভাবেও পরনির্ভরশীলতা।
দুজন মিলে কুড়াতাম ফুল প্রতিযোগিতা করে, কার চেয়ে কে পারে
বেশি কুড়িয়ে নিতে। একের ফুলঝুড়িতে অন্যের লুণ্ঠণকারী হাত
লেগে যেতো অকপট চুরি চামারিতে।

এই নিয়ে বিস্তর ঝগড়া শুরু হতো দুজনাতে, সে বিবাদ
বেশিক্ষণ হতো না তো স্থায়ী, আমিই উপযাজক মিলে যেতাম তার সাথে।
‘কাল থেকে তুমি আর এসো না ফুল কুড়াতে, তোমার নিপুণতার কাছে
আমি বড়ই অদক্ষ’-বলতো সে কোনোদিন
আবার কোনোদিন আমাকে নিজেই দিতো উপহার শিউলি ফুলের মালা।

সোনালি সে দিনগুলো ক্ষিপ্র দমকা বাতাসে
ভেসে গেছে কোন দূরে। আজকাল মাধবীলতার কথা মনে আসতেই
বড়ো বেশি পাশ কেটে দিতে চাই, পরনির্ভরশীল সেই মেয়ে চলে গেছে
পরপারের অজানায়। যে গেছে চলে তার কথা ভেবে ভেবে
লাভ কি আছে কোন! এ যে চিরতরে যাওয়া।

এখনো শরৎ আসে, আসে কমলা বোটার সাদা শিউলি কলি
ঝরে থাকতে পুকুরের ধারে যেমন থাকতো ঝরে
যখন মাধবী ছিল।
আমি যাই শিউলী তলায় ধীরপায়ে। শরতের কুয়াশায়
ঝরা ফুল পরে থাকে থোকা থোকা- ইচ্ছে করে না কুড়াতে ফুল
চাদরের ভাঁজ থেকে হাত বের করে, এমনি কুড়েমি ধরেছে আমায়।

মনে হয় কে এক প্রেতাত্মা
ঘুরে মরে শিউলিতলার ঘাসে। আমার সাক্ষাৎ মাত্র বলে-
‘কাল থেকে তুমি আর এসো না
ফুল কুড়াতে, তোমার নিপুণতার কাছে আমি বড়ই অদক্ষ।’
চোখে জল এসে যায়, কুয়াশার মাঝে চোখ মুছতে মুছতে
ফিরে যাই ঘরে। এখন আমায় আর
উপহার দেয় না কেউ শিউলি ফুলের মালা।