কবিতার সময় ও মনীষার দান: মননশীলতার শুদ্ধ উচ্চারণ


উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে একজন সমালোচককে শেষ পর্যন্ত ঝুঁকিই নিতে হয়। ঝুঁকি হলো, একজন সমালোচক সবার মনঃপূত হন না। আর তাই তার সৃষ্টিশীল লেখাগুলো Conspiracy of Silence-এর শিকার হয়। অথচ সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে মননশীলতার প্রাজ্ঞ বিবেচনা না থাকলে একজন বড় কবি হিসেবে স্বীকৃত হন কি না—সে  বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। বুদ্ধদেব বসুর মধ্যে এ দুয়ের সমন্বিত প্রতিভা ছিল। বিশ্ব সাহিত্যে টিএস এলিয়ট শুধু বড় কবিই নন, বড় সমালোচকও। এলিয়ট  সমালোচনা সাহিত্যকে সাহিত্যধারার হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কাব্য সাহিত্যেও সেই হৃৎপিণ্ডকে বহুলাংশে স্পন্দিত রেখেছেন মোহাম্মদ নূরুল হক। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা তিন। ইতোমধ্যে তার প্রকাশিত প্রবন্ধ বইয়ের সংখ্যা ছয়। ষষ্ঠ বইটির শিরোনাম,  ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান’। মোহাম্মদ নূরুল হকের কিছু স্বকীয় প্রাবন্ধিক দৃষ্টিকোণ এবং সামালোচনারীতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ফলে তার ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান’ প্রবন্ধের বইটি নিয়ে কিছু লেখবার দায় অনুভব করেছি।

আলোচনায় কবিদের প্রকরণ চৈতন্যকেই প্রগাঢ়ভাবে দেখিয়েছেন

শিরোনাম দেখেই বোঝা যায় নিজের সময়ের অভিজ্ঞতাকে মনীষা তথা প্রজ্ঞার প্রত্যয়ে যে-সব কবি অভিযোজিত করেছেন, অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাদের কাব্য প্রেরণায়, তারাই গুরুত্ব পেয়েছেন তার এই গ্রন্থে। কিন্তু এই গ্রন্থে আলোচনার পরিসর দেখে সেই গুরুত্বকে বিবেচনা করলে চলবে না। লেখকের দৃষ্টিকোণ এবং যে মৌল ভিত্তি লেখক শিরোনামে ইঙ্গিত করেছেন, সেই সূত্র ধরে এগিয়ে গেলে আলোচনায় কাকে কতটুকু  স্পেস বা পরিসর দিলেন,  সেটুকু পাঠকের বিবেচনায় আসবে না বলেই মনে হয়। এ কথা বলার কারণ হলো আধুনিক বাংলা কবিতার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আলোচনায় তিনি সবচেয়ে  কম সময় দিয়েছেন। সম্ভবত কারণ হলো বিগত সময়ে জীবনান্দ দাশকে নিয়ে এত বিপুল আলোচনা ও তার প্রতিভা নিয়ে এত বিস্ময় বিবৃতি জমা হয়ে আছে যে, সমানুপাতিক আলোচনার স্তূপ এখানে বাহুল্য বিবেচিত হবে। ফলে বহুল পঠিত এই কবির ব্যাপারে মোহাম্মদ নূরুল হক কিছু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ উস্কে দিয়ে ক্ষান্ত হয়েছেন।

মোহাম্মদ নূরুল হকের সমালোচনারীতি ইতিবাচক মনোবৃত্তির। কেবল জীবনান্দ দাশের আলোচনায় সময়োপযোগী ও যৌক্তিক ভিন্নতা বজায় রেখে তিনি বললেন, ‘জীবনানন্দ দাশের কবিতা মাদকতাপূর্ণ। তার কবিতা মগজে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। কিন্তু হৃদয়কে আলোড়িত করে। মনকে করে দেয় ইতস্তত, বিক্ষিপ্ত।’ আবার  ‘বোধ’ কবিতার আলোচনায় তিনি এক পর্যায়ে বলেন,  ‘এই অনুভব মানুষকে চিন্তিত করে না, উৎকণ্ঠিত করে।’ আবেগবহুল বাঙালি পাঠকের কাছে মোহাম্মদ নূরুল হকের এই আলোচনা কিছুটা রূঢ় মনে হতে পারে। কিন্তু একদেশদর্শী বিস্ময়চকিত সমালোচনার আবেগী বন্ধন কিছুটা ছিন্ন করার সময় হয়েছে। নইলে কেবল অনুরাগের প্রশ্রয়ে সমালোচনার নামে গদ গদ ভাবলুতা তৈরি হবে। নতুন চক্ষু উম্মোচন হবে না। মোহাম্মদ নূরুল হক সেই চক্ষু উম্মোচনের দায় নিয়েছেন বলে মনে হলো।  এখন কথা হলো, আধুনিক কবিতা কেবল আবেগী স্ফূর্ততায় স্বার্বভৌম নয়। আধুনিক কবিতা নির্মিতিরও ব্যাপার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের  কাব্যালোচনায় এই নির্মিতির প্রকাশ-কৌশল নিয়ে  বিশ্লেষণ  চোখে পড়ে কম। অর্থাৎ কবির প্রকরণ চৈতন্যকে প্রায়ই আলোচনায় অগ্রাহ্য করা হয়। তবে আলোচ্য গ্রন্থে লেখক ভাব বা বিষয় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি কবিতার আঙ্গিক, ছন্দ, অন্ত্যমিল-অনুপ্রাস, পর্ব-পঙ্‌ক্তি-স্তবক বিন্যাস, এমনকি কবির ব্যবহৃত চিত্রকল্প-উপমা নিয়ে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছেন। ফলে পাঠক আলোচিত কবিদের কবিতার বিষয় ও আঙ্গিক সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাবেন। আবার লেখক ভূমিকায়  বলেন, ‘কবিতা যে কেবল আবেগের ফল্গু-ধারা নয়, মনীষারও দীপ্তি, এটি কবিযশপ্রার্থী কিংবা আলোচক কেউ স্বীকার করেন না। অথচ বিশুদ্ধ কল্পনা, কল্পনার  ভেতরের সারবত্তা ও যৌক্তিক চিন্তার শ্রেষ্ঠতম ফসল কবিতাশিল্প- যদি তারা কবিতাকে শিল্প হিসেবে সৃষ্টি করতে চান।’ ফলে আমরা বুঝতে পারি, লেখক তার আলোচনায় কবিদের প্রকরণ চৈতন্যকেই প্রগাঢ়ভাবে দেখিয়েছেন, শুধু এমনটি নয়। প্রজ্ঞাপ্রকল্পিত একটা ভিত্তির ওপর তার সমালোচনার নতুন নীতিকে তিনি দাঁড় করাতে চেয়েছেন।

এই গ্রন্থে আলোচিত দ্বিতীয় কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ওপর লেখকের আলোকপাত থেকে  আমার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই হতে পারে। সুধীন দত্তের ওপর আলোচনার  প্রায় শুরুতেই একটা গুরুত্বপূর্ণ  কথা বলেছেন লেখক। বলেছেন, ‘মনের বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃজনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ, কিন্তু শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির পূর্বশর্ত শৃঙ্খলা।’  নিঃসন্দেহে এই উক্তি সমালোচক হিসেবে মোহাম্মদ নূরুল হকের ধীশক্তির স্বাক্ষর বহন করে। আর সুধীন্দ্র নাথ দত্তের কবিতায় শৃঙ্খলার বৌদ্ধিক প্রয়োগ শিল্পিতভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করেন লেখক। মনে করেন,  ‘তাঁর কবিতায় আবেগের চেয়ে প্রজ্ঞা, কল্পনার চেয়ে অভিজ্ঞতা এবং ভাবালুতার চেয়ে বৃদ্ধিবৃত্তির পরিচয় বহুল পরিমানে।’ প্রজ্ঞা আর বুদ্ধিবৃত্তিক এই সমন্বয় আছে বলেই সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা জীবনানন্দ দাশের কবিতার  চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। লেখকের আলোচনায় পরিসর পেয়েছে বেশি। কেননা আগেই বলেছি লেখক তার সমালোচনাকে প্রজ্ঞাপ্রকল্পিত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চান। সেজন্যে সুধীন দত্তের কবিতা বেশি উপযোগিতা পেয়েছে। তাই নিজের বক্তব্যের প্রতিষ্ঠা দিতে লেখক পুর্ববর্তী দুই অগ্রজ সমালোচকের বক্তব্যকে নির্দ্বিধায় অগ্রাহ্য করতে চান। মোহাম্মদ নূরুল হক  বলেন, ‘সুধীন দত্তের শিল্প বা কাব্যসিদ্ধি নিয়ে সৈয়দ আলী আহসান নিঃসংশয়, কিন্তু আদর্শিক বৈপরীত্যের কারণে তার প্রতি তিনি সুপ্রসন্ন হতে পারেননি। একই রকম অপ্রসন্ন ছিলেন দীপ্তি ত্রিপাঠীও।’ এভাবে সুধীন দত্তের কবিতা নিয়ে এই গ্রন্থে লেখক একটা নতুন ডিসকোর্সের জন্ম  দেন। লেখকের আলোচিত পরবর্তী দুই কবি  হলেন শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ। শামসুর রাহমান সম্পর্কে তার শুদ্ধ সুন্দর উচ্চারণ হলো—‘তাঁর বড় অর্জন অন্য জায়গায়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, গ্রামীণ পটভূমির সঙ্গে নাগরিক ধারার সমন্বয় সাধন আধুনিক বাংলা কবিতার বড় সংকট। দর্শনে-চিন্তায়, কল্পনায়-স্বপ্নে, বর্ণনায়-চিত্রায়ণে, আঞ্চলিকতার সঙ্গে জাতীয়তার এবং দেশীয় বিষয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতার সমন্বয়ে নৈপুণ্য দেখাতে না পারলে আধুনিক কবিতা কৈশোরকালই পার হতে পারবে না।

শামসুর রাহমান কবিতার এই দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন কবি জীবনের শুরুতেই।’ শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে এই সমন্বয় প্রচেষ্টাকে চিহ্নিত করা নিশ্চই কাব্য পাঠের ঋদ্ধতাকে প্রমাণ করে। আবার আল মাহমুদ সম্পর্কে ঠিক এর বিপরীত কথাই বলেন লেখক। বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে নাগরিক জীবনের গ্লানি এবং শেকড়েরর প্রতি আকর্ষণ- এ দুয়ের টানপড়েনে আল মাহমুদ সমন্বয়বাদী নন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী।’ ফলে শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ—কাব্যজগতের এই দুই মহারথির কাব্যচেতনার বিপরীতধর্মিতা আমাদের জন্য উপভোগ্য করে তোলেন মোহাম্মদ নূরুল হক।

মৌলিক শিল্পী বুদ্ধি নয় আবেগে সমর্পিত

কারও কারও মনে হতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা ও মনীষার নিরাবেগ শিল্প নৈপুণ্য ছাড়া মোহাম্মদ নূরুল হক কবিতাকে আর কিছু ভাবেন না। কিন্তু পাঠকের এই ভাবনা সঠিক হবে না বলেই মনে করি ।  কেননা কবিতায় আবেগরহিতকরণ প্রক্রিয়াকে লেখক সমর্থন করেছেন, এমনটি নয়। বরং তিনি আবেগকে বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শাসনে সংহত অবস্থায় দেখতে চান। নইলে যার আবেগই নেই, তার যান্ত্রিক মননে কাব্যের প্রণয় থাকা স্বাভাবিক নয়। এই বাস্তবতা তিনি সর্বাংশে মানেন। তাই আল মাহমুদের কাব্যালোচনায় তিনি চমৎকার শিল্প-দর্শন উপস্থাপন করেন, যেখানে আবেগ সর্বোতভাবে সমর্থন পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘মৌলিক শিল্পী বুদ্ধি নয় আবেগে সমর্পিত। চিন্তা ও কর্মের প্রতি মুহূর্তে আপন কর্মের পক্ষে পটভূমি ও ব্যাখ্যা রচনা করা তার স্বতঃসিদ্ধ অভিপ্রায় ও অভ্যাস।’

আল মাহমুদের পর মোহাম্মদ নূরুল হক একে একে আলোচনা করেছেন মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজ আবিদ আনোয়ার, হেনরী স্বপন ও শামীম রেজাকে নিয়ে। প্রত্যেকটি আলোচনায় লেখকের বৈদগ্ধ্য এবং শিল্প নিপুণ দৃষ্টিকোণ তার স্বকীয় সমালোচনা রীতির সুদক্ষতাকে সুস্পষ্ট হয়েছে।  হেলাল হাফিজ ও হেনরী স্বপনের কবিতালোচনায় এই দুই কবির কাব্যের বিষয় ও প্রকারণগত প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো লেখক ১, ২ করে সারিবদ্ধভাবে বিন্যস্ত করেছেন। ফলে সব আলোচনার পাশাপাশি বিশেষ এই দুটো আলোচনা সাহিত্যের ছাত্র-শিক্ষকের একাডেমিক প্রয়োজনীয়তা কিছুটা  হলেও মেটাতে পারবে। প্রতিটি একাডেমিক আলোচনা একটা সিস্টেমেটিক স্বচ্ছতা দাবি করে। ব্যক্তি কবির নিজস্ব অভিপ্রায় এবং অনুভূতির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লিখিত নয় বলে মোহাম্মদ নূরুল হকের এই প্রবন্ধ গ্রন্থটি সুলিখিত ধারাবাহিকতাকে অবলম্বন করেছে। এই দিক  থেকেও গ্রন্থটির একাডেমিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ছন্দের আলোচনায় প্রায়োজনবোধে তিনি কবিতার পঙ্‌ক্তির ছান্দিক পর্ববিন্যাস ভেঙে-ভেঙে দেখিয়েছেন। বিকল্প যে বিন্যাসটি হতে পারতো তা তুলে ধরে কবির দক্ষতাকে আরও সুস্পষ্টভাবে নিরূপন করে দিয়েছেন। ফলে কবির কাব্যপ্রকরণের দক্ষতার দিকে পাঠকের মন ইতিবাচক সাড়া দেবে। কবিতার বিভিন্ন বাঁক ও ভাঙনের রেখাগুলো তিনি দৃষ্টির সুক্ষ্মতা দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। হেলাল হাফিজকে নিয়ে  তার মন্তব্য হলো—‘হেলাল হাফিজ এই খুশিমতো ভাঙাগড়ার কাজে স্বতঃস্ফূর্ত। নিয়ম মেনে যেমন তার কবিতা রচিত হয়েছে। তেমনি নিয়মের ব্যত্যয় করেও। তার কবিতায় প্রাণ ধর্মের উপস্থিতি সর্বাধিক, চিন্তনের রেশও কম নয়।’ আলোচিত কবিদের কবিতায় এই বৈপরীত্যের অনুসন্ধান তার সমালোচনার একটি সাধারণ ও স্বকীয় রীতিতে পরিণত হয়েছে। এই গ্রন্থের একটি বিশেষ দিক হলো অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত কতিপয় কবিকে অন্তর্ভুক্ত করা। বিষয়, বুনন ও আঙ্গিকের দক্ষতায় বিশিষ্টতার বহু গুণ থাকা সত্ত্বেও আবিদ আনোয়ার আমাদের দেশে অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত। আবিদ আনোয়ারের কবিতার প্রকরণের নানা দিক ও বিশিষ্টতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ নূরুল হক। হেনরী স্বপন ও শামীম রেজা অপেক্ষাকৃত তরুণ। ১৯৯০ সালের প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কাব্য প্রতিভার উত্থান শুরু হয়। ব্যাপকভাবে আলোচিত হওয়ার জন্য আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে তাদের। কেননা তরুণদের নিয়ে আলোচনা না করার ক্ষেত্রে আমাদের কারও কারও ছুৎমার্গীয় বিবেচনাই দায়ী। কিন্তু মোহাম্মদ নূরুল হক সেই ছুৎমার্গ কাটিয়ে তার আলোচনায় এই দুই তরুণ কবিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাকে সাধুবাদ।

মোটামুটিভাবে বলা যায়, কাব্যের আবেগের মধ্যে  মননশীল প্রজ্ঞা তথা মনীষার শিল্পিত উপস্থিতি  যাচাই, কবিতায় ব্যবহৃত আবেগের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতার নান্দনিক সংহতি আবিষ্কার, দুই বিপরীত চেতনার সমন্বয়ে গঠিত শিল্পিত ব্যঞ্জনার অনুসন্ধান এবং প্রকরণের নানা দিকে কবির কৌশলী দক্ষতা এবং একনিষ্ঠতার পরীক্ষাই তার সমালোচনার মৌলিক গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করে। সেক্ষেত্রে সর্বোতভাবে ইতিবাচক  দৃষ্টিকোণের লালন তার সমালোচনাকে একই সঙ্গে পাঠকবান্ধব এবং কবিতাবান্ধব করে তুলেছেন। উত্তর ঔপনিবেশিক চিন্তার প্রশ্নবিদ্ধতা দিয়ে কবিতার নেতিবাচক দিকগুলো শাণিত ইঙ্গিতে বেঁধে দিলে কবি এবং পাঠক উভয়ই তার আলোচনা থেকে শিল্পিত শিক্ষার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাবেন। এই সামান্য পরামর্শ ছাড়া কাব্যের নানা দিক বিবেচনার স্বার্থে পাঠকের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকে শাণিত করতে মোহাম্মদ নূরুল হকের  ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান’ গ্রন্থটি পাঠ করা যেকোনও বিদগ্ধ পাঠকের জন্য জরুরি মনে করি।