বাবা
বাবা তো ক্রন্দনরত পাহাড়ের নাম
আদিপাপ মোছনের দায় নিয়ে কাঁধে
চিরকাল পরে যান দাসত্ব শৃঙ্খল।
চোখে তার সন্ত্রস্ত আকাশ
বুকে তবু ধরা থাকে বিপুল সাহস।
বাবা তো ক্রন্দনরত আকাশের নাম
শরশয্যায় শায়িত, তবু দেখে আশা
মেঘের মেয়ের সঙ্গে মিতালি পাতায়
বজ্রের আঘাতে হাসে চোখের সীমানা।
বাবা তো ক্রন্দনরত সাগরের নাম
একবার ডাক দিলে দখিনা বাতাসে
কেঁপে ওঠে বঙ্গোপসাগর
পৃথিবীতে নেমে আসে নুহের প্লাবন।
চিরকাল ঠকে যাওয়া কোমল হৃদয়
অথচ সন্তান জানে, ‘বাবারা কঠিন
বাবারা করেন শুধু নিঠুর শাসন।’
বাবা যে মেঘের ছায়া রোদ্দুরে দুপুরে
জানেন পরমেশ্বর, জানে মহাকাল।
বটতলা
এই বটতলা দিয়ে মেঠোপথ ধরে চলে গেছে
কত না পথিক
আমাদের শৈশবের ভোরের হাওয়া, বিকেলের
পড়ন্ত বেলার ঘরমুখো সব দুরন্ত বালক
সেইসব লাল নীল দিনগুলো, উত্তপ্ত দুপুর
সেই ছায়াঢাকা পথে আমরা কজন
ডাংগুলি-গোল্লাছুট অথবা উড়ন্ত
ঘুড়ির সুতো কাটার মতো দিনমান
বনে ও বাদাড়ে ঘুরে বিপন্ন সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা…
আসাদ অথবা ধনু কাকা, সাইফুল
অথবা খলিল কত কত পথ হেঁটে
মাইল মাইল রাত শেষে শান্ত ভোরে
দোয়েলের শিষ দেওয়া হাওয়ায় হাওয়ায়
ভেসে আসা ঘ্রাণ মেখে গায়ে কত বার
ছুটে ছুটে গেছি কিশোরীর ঢেউ ঢেউ
চুলের বেণীর মতো মেঘনার বুকে
আহা চৌরাস্তার মোড়ে, আহা স্কুলের মাঠ
অথবা পুবের ঘন ঘুমন্ত জঙ্গলে
অথবা মুন্সীর হাট, অথবা খেলার মাঠ ছেড়ে
ধানক্ষেতে ফড়িঙের পিছু পিছু দুরন্ত শৈশবে
আজ দুপুর রাত্রির মতো জীবনের মাঝপথে
মনে পড়ে সেইসব দিন!
ভালো আছ বটতলা, ভালো আছ ভীরু মেঠোপথ?
জন্মদিন
জন্মদিন এলে মনে পড়ে
কত বর্ষা—কত শীত-হেমন্ত-বসন্ত
পার করে এসেছি এমন!
কত শৈশব-কৈশোরে
কত জলভরা দিঘি—ঢেউ ঢেউ নদী
আমাকে একেলা পেয়ে দেখিয়েছে মনসার ভয়।
আমিও চাঁদসদাগর; হাতে হেঁতালের লাঠি
নির্ভয়ে দিয়েছি পাড়ি সমুদ্রমাতাল।
মৃত্যুরে করিনি ভয়।
আহা মধুর যৌবন—
মৌবনে ঝড় তুলে অসুখী এখন
আমাকে দেখায় নিত্য পাপপুণ্যের ভয়।
আমিও জলের নাগর
চুমো খাই হাঙরের ঠোঁটে
তবে কেন হায়—
যতবার ফিরে ফিরে আসে জন্মদিন
ততবার শুনি এক মৃত্যুর সঙ্গীত!