মিডিয়াবাজ সব লেখককেই গুরুত্বহীন মনে হয়: শফিক হাসান


জলছবি: এই সময়ের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আপনার  মূল্যায়ন কী?
শফিক হাসান: সমকালে থেকে সমকালকে ধারণ করা, দেখতে পাওয়া তথা মূল্যায়ন করা একটু কঠিনই। তীক্ষ্ন দৃষ্টির কেউ কেউ হয়তো মূল্যায়ন করতে পারেন, সময়ের গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারেন। আমার মতো অধিকাংশই এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হবেন বলেই ধারণা! তবে বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি—এমনটা ভাবতে ভালো লাগে।

জলছবি: এই সময়ের কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ কোন পথে যাচ্ছে?
শফিক হাসান: এই সময়ের সাহিত্য কোন পথে যাচ্ছে, সেই জবাবে প্রথম প্রশ্ন-উত্তরটি দেখিয়ে “ওই” বলে দিতে পারি! তবে ভালো কবিতা, ভালো গল্প, ভালো উপন্যাস কিংবা প্রবন্ধ সবসময়ই কম লেখা হয়। ভালো লেখা সেটাকেই বলবো, যেটা লেখকের মৃত্যুর পরেও টিকে থাকে। সুতরাং এখনকার চর্চা কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা বুঝতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। চর্চা হয়তো ভালো হচ্ছে, হয়তো হচ্ছে না। ভালো-মন্দ বিচার দূরে সরিয়ে রেখে চর্চা অব্যাহত রাখাই বড় কথা। সময়ের ফেরে ধান পড়ে থাকবে, চিটা ভেসে যাবে।

জলছবি: আপনার মতে এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ লেখক কারা?
শফিক হাসান: এটা একটা বিপজ্জনক প্রশ্ন! যার নাম আমি বলতে পারবো না কিংবা বলবো না তিনি তো সহজেই আমাকে ‘হালার পুতে কিচ্ছু জানে না’ বলে গালি দিয়ে বসবেন! বিচার-বিশ্লেষণে না গিয়ে কার কার লেখা আমার ভালো লাগে নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে পড়ি—তাদের ক’জনের নামই না-হয় বলি। কথাসাহিত্যে মঞ্জু সরকার, সালেহা চৌধুরী, আনিস রহমান, আহমাদ মোস্তফা কামাল, ইমদাদুল হক মিলন, সুমন্ত আসলাম, রফিকুর রশীদ, সাদিয়া সুলতানা, মিলা মাহফুজা, দীলতাজ রহমান, মোহছেনা ঝর্ণা, মাইনুল এইচ সিরাজী প্রমুখের লেখা ভালো লাগে। আবার বর্তমানে এমন অনেক লেখক আছেন, যাদের লেখা আমি পড়িনি বা পড়ার সময় পাইনি। যে নামগুলো বলছি, সেগুলো মূলত অতীত-পাঠ! নাম বলিনি—সেবা প্রকাশনীর লেখকরা আমার ভীষণ প্রিয়। আগ্রহ নিয়ে তাদের লেখা পড়ি। ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতা ভালো লাগে। যদিও এই সময়ের কবিরা তাকে যথেষ্ট গালমন্দ করেন। তিনি নাকি কবিতার নামে প্রবচন লেখেন! কথা সত্য হতে পারে, আবার হিংসা থেকেও বলা হতে পারে। নিজেদের ব্যর্থতার ভার অন্যকে গালমন্দ করেও যদি ঢাকা যায়—মন্দ কী!

জলছবি: এই সময়ের লেখকদের মধ্যে আপনার পছন্দের লেখক-কবি কে?
শফিক হাসান: অনেকের লেখাই পড়ি দৈনিক পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্যপত্রিকায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কিছু লেখা পড়া হয়ে যায়। ওই অর্থে আমার গভীর কোনো পাঠ নেই। একজন লেখককে শনাক্ত করার মতো তেমন করে কিছু পড়তে পারিনি। তাই নাম বলা যুক্তিযুক্ত হবে না!

জলছবি: এই সময়ের কার কবিতা-প্রবন্ধ-গল্প-উপন্যাস পড়লে আপনার মন প্রসন্ন হয়?
শফিক হাসান: হিরণ্ময় হিমাংশু, বঙ্গ রাখালের কবিতা পড়ি। ভালো লাগে। আশান উজ জামান, সাব্বির জাদিদ, লুনা রাহনুমা, জোবায়ের মিলনের গল্প ভালো লাগে। মোহাম্মদ নূরুল হক, মামুন রশীদ, মামুন মুস্তাফার প্রবন্ধ আমাকে টানে। উপন্যাসের ভালো পাঠক নই। তবে সময় পেলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সুমন্ত আসলামের উপন্যাস পড়ি।

জলছবি: এই সময়ের কার কবিতা-প্রবন্ধ-গল্প-উপন্যাস পড়লে আপনার সময়ের অপচয় মনে হয়?
শফিক হাসান: সেটা অনেকের ক্ষেত্রেই মনে হয়। সময়ের অপচয় নিজের লেখা পড়লেও হয়। কারও নাম বলে প্রকাশ্য শত্রু বাড়াতে চাই না। আবার প্রচারসর্বস্ব লেখক মানেই ভালো লেখক নন কিংবা খারাপ লেখক নন! সবচেয়ে কথা, আমি পাঠক— নিজের ভালো না-লাগা নিয়ে কাউকে খারিজ করা সমুচিত হবে না।

জলছবি: এই সময়ের লেখকদের মধ্যে আপনার পছন্দের লেখকের কোন বিষয়টিকে অপছন্দ করেন?
শফিক হাসান: গতানুগতিক বিষয় নিয়ে লেখা ভালো লাগে না। সস্তা প্রেমের প্যানপ্যানানি, সাংসারিক ক্যাচাল এসব বহু ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে গেছে।

জলছবি: আপনার সমকালীন লেখকদের মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখবেন? নিজেকে কোথায় রাখতে চান?
শফিক হাসান: কৃষ্ণ জলেশ্বর, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, স্মৃতি ভদ্র, মাহরীন ফেরদৌস, মনিজা রহমান, হামিম কামাল প্রমুখকে এগিয়ে রাখতে চাই। নিজেকে কোথাও রাখতে চাই না। সেই আত্মবিশ্বাস আগে কখনো ছিল না, এখনো তলানিতেই। আসলে এত বেশি ভালো লেখা হয়েছে ও হচ্ছে— সেখানে নিজেকে খড়কুটো বলেও দাবি করার সুযোগ নেই। আত্মবিশ্বাস বহু দূরের কথা!

জলছবি: মিডিয়ার কল্যাণে প্রচার পাওয়া কোন লেখককে আপনার গুরুত্বহীন মনে হয়?
শফিক হাসান: মিডিয়াবাজ প্রায় সবাইকেই গুরুত্বহীন মনে হয়। লেখার গুণে লেখক হিসেবে পরিচিত না হয়ে প্রচারের গুণে সামনে আসাকে অপরাধ মনে করি। গুরুত্ব দেওয়া উচিত বিলুপ্ত প্রজাতির হলেও পাঠককে— বিজ্ঞাপনের ভেলকিবাজিকে নয়। এতে বাজার মাত করা গেলেও, কাটতি বাড়ানো গেলেও শেষপর্যন্ত লেখক বা পাঠক কারও উপকার হয় কি না—প্রশ্ন থেকেই যায়!

জলছবি: মিডিয়ার আড়ালে থেকে যাওয়া কোন কবি-কথাশিল্পীকে আপনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়?
শফিক হাসান: মিডিয়ার আড়ালে যারা থাকেন, অধিকাংশ আড়ালেই থাকেন। তাদের বসবাস প্রত্যন্ত গ্রামে বা মফস্বলে। তাদের আমরা আবিষ্কার করতে পারি কমই। সঙ্গত কারণেই কোনো কবি বা কথাসাহিত্যিকের নাম উচ্চারণ থেকে বিরত থাকলাম!