গোলাম কিবরিয়া পিনু’র কবিতা


ভূগোল
যার তার বুকে মাথা রেখে
.                   ঘুমিয়ে পড়ছ।
এত বুক বদল করছো কেন?
কার বুকজমিনে কী ফসল পাচ্ছ!
নিজের বুকের ফসল বিলিয়ে দিচ্ছ?
নাকি যার বুকে মাথা রাখছো—
.                   তার সমূহ ফসল লুঠে নিচ্ছ?

দেশ পাল্টানোর সাথে সাথে
বুকও পাল্টাচ্ছো?
নগর পাল্টানোর সাথে সাথে
বুকও পাল্টাচ্ছো?

তোমার ভূগোলে লোভ? নাকি ক্ষুধা? নাকি সুধা?
প্রেম তো এতটা উন্মুক্ত ও সাম্যবাদী হয়ে উঠেনি,
যে বুক বদলের সীমা ও পরিসীমা থাকবে না!

তোমার জীবনের অভিধানটা এতটাই
                  বিবর্তনমূলক হয়ে উঠছে!
মুহূর্তে মুহূর্তে নতুন নতুন শব্দ সংযোজিত হচ্ছে!
সেইসাথে শব্দের অর্থও পাল্টে যাচ্ছে!

তুমি হয়ে উঠছো অস্মহস্তি!
.            কখনো ঘোড়ার রূপে আবির্ভূত হচ্ছো!
.                 কখনো হস্তির রূপে আবির্ভূত হচ্ছো!

প্রশ্ন
প্রশ্নের আওতায় তোমাকেও নিয়ে আসতে চাই
প্রশ্নকে এত ভয় করছো কেন?
.            প্রশ্ন না থাকলে
               উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না!

উত্তর না জানলে
দক্ষিণে যাচ্ছো নাকি উত্তরে যাচ্ছো
               তা বুঝতে পারবে না!
কী খাচ্ছো? কেন খাচ্ছো?
                      তা জানতে পারবে না!
শুধু গলাধঃকরণ করলেই তো হবে না!

প্রশ্ন করা মানুষ ভুলে যাচ্ছে!
              প্রশ্ন করতেও দিচ্ছে না!
                          প্রশ্নকে কেউ কেউ ভয় করছে!

গ্রীবা ঘুরিয়ে গ্রীষ্মকালে গ্রীসে কেন যাওয়া যাচ্ছে না?
কলাক্ষেত থেকে যে কলাটা হাতে তুলে নিচ্ছি,
.                                তা মুখে দিতে পারছি না কেন?
গাঙে নৌকা চালাতে পারছি না কেন?
গাঙশালিকেরা গাঙ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে কেন?

প্রশ্ন উধাও হলে
কতকিছু যে উধাও হয়ে যাবে!
                         বুঝতেই পারবো না!
কেন কলহ বাড়ছে? কেন বিভেদ বাড়ছে?
অশান্তির ভূগোলে অস্বস্তি নিয়ে
                             কেন অসাড় হয়ে পড়ছি?

বেঁচে থাকতে হলে প্রশ্ন করা শিখি!
লিখি উত্তরও!
উত্তর না পেলে উত্তরপাড়ায় থেকেও কোনো লাভ নেই!

সম্মোহন
ভুয়া লোকেরা কুয়ার তলা থেকে উঠে এসে
                                              ধুয়া তুলছে!
পানের বাটা খুলছে!
পান খেয়ে ঠোঁট লাল করতে করতে
ধন্ধুমার অবস্থা তৈরি করছে!

তাদের ধুম্রজালে
শুধু মাছি আটকে পড়ছে না
.                                আমরাও আটকে পড়ছি!

গর্ত থেকে শিয়াল বের হয়নি
            বন থেকে লোকালয়ে আসেনি বাঘ!
তারপরও তা বিশ্বাস করে
আমরাও হয়ে পড়ছি ভীতসন্ত্রস্ত!
বস্ত্র না পরেই ঘর থেকে বের হয়ে
                                            দৌড়ে পালাচ্ছি!
দৌড়াতে দৌড়াতে নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত
.                               আমাদের নিস্তার নেই!

ভুয়া লোকেরা কখন যে এমন ধুয়া তোলে
আমিও মৃত! তা বিশ্বাস করে
মৃতের ভাগাড়ে নিজেকে ফেলে আসি!
তার আগে নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখছি না
.                                        আমি বেঁচে আছি কিনা?
এতটাই সম্মোহনে বুঁদ হয়ে পড়ছি!