সাংবাদিক
একদিন নিমাই ভট্টাচার্যের
মেমসাহেবের নায়ক হতে
কতবার বাস্তবের চৌহদ্দি
রঙিন ফানুসে উড়িয়েছি।
অথবা দূর নিকটে
নির্মল সেন-রাজনীতির পাথরে
সাংবাদিক অভিধায় জ্বলজ্বলে নক্ষত্র;
এসব উৎকৃষ্ট উদাহরণ-বেকুব মন
অদূর ভবিষ্যতে সাংবাদিক হওয়ার
তুমুল স্বপ্নালোড়ন।
আর আজ কলমপেষা
সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছেটা
কাল হয়েছে যেন; শব্দের
ফুলঝুরিতে নেই প্রাণস্পন্দন!
গার্মেন্ট কর্মীরা দুতিন মাসের
বকেয়া দাবিতে রাস্তায় নামে
রোদ-তপ্ত সড়ক-পিচ গলে গলে
পড়ে ক্রোধ আর ক্ষোভের জোয়ারে।
অথচ বছর ছুঁই ছুঁই
করলেও বকেয়ার প্রশ্ন যেন
বেকসুর বেমানান সংবাদপত্রে।
কাগজ খেয়ে তো আর
জীবন বাঁচে না।
নিখোঁজ
নদী জানে-তাকে জাগাতে
বর্ষামঙ্গল কাব্য লাগে
পরম যত্নে-শীতল বিশ্বাসে
দিন-রাত অঝর কান্না লাগে!
তারপর যায়যায় বিকেলে
রঙধনুরাঙা মেঘের লুকোচুরিতে
কেউ কি জাগে?
তুমি জানো-
তোমাকে ছোঁয়ার আগে
একান্ত করপুটে আমার প্রস্তুতি
চিন্তাবিন্দুতে শিহরিত হবার দৃশ্যকল্প
উদগ্র মৌনতায়!
তারপর যেই তোমাকে ছুঁই!
খোঁজ খোঁজ রব উঠে চারদেয়াল কাঁপিয়ে।
আঙুলের মিহি ছোঁয়ায়
অনবরত কী যেন খুঁজতে থাকি
খুঁ-জ-তে … খুঁ…জ…তে…
মুখে কথার তুবড়ি ফোটে
তারপর কখন জানি
মদির আনন্দে নিজেই
নিখোঁজ হয়ে যায়।
সমতা
ঢেউ ভেঙে হয় ঢেউ
চাঁদের কপালে চাঁদ
কী করে টিপ দেয়?
জল শুকিয়ে হয় মেঘ
পাহাড় চূড়া ছাড়িয়ে-
আকাশ দিগন্ত ছোঁয়
আসলে কি তাই!
দুজনের একই বেড নম্বর
দেহের ঠিকানাও এক…
মিলেমিশে একাকার
তবু রাত পেরুলে-
নারী-পুরুষের সমতা
বইয়ে-পড়া তত্ত্বকথা।
মেধা
প্রাচুর্য-সম্পদ অথবা ঐশ্চর্য
হয় না কেন অঢেল
মানুষের চির আকাঙ্ক্ষা মেশে
অপূর্ণতার সমুদ্রে।
কেউ কেউ করে সম্পদের বেসাতি
আর কেউ মেধা ও মননের।
ছায়াহীন শৈশব
সবার বয়স বাড়ে
বাড়ে না আমার হারানো
শৈশবের।
হাসতে পারে যে কেউ
শৈশব আবার না হারিয়ে
থাকে কোথায়?
কেন? যদি শৈশবের দেখা নদীটি
খাল হয় শুকিয়ে
কিংবা বাড়ির সামনের ধূলিধূসর
কাদামাটির রাস্তাটা প্রথমে
ইটের হেরিং
তারও পরে-অনেক পরে
পাকা সড়ক
অথবা
একতলা অ-আ-ক-খ
পড়ার স্কুলঘর
সিঁড়ির ভাঁজ পেরিয়ে দোতলা
কিংবা আড়াইতলা ছুঁই ছুঁই করে-
বাড়ে নিশ্চয় তাদেরও বয়স।
এসবই আমার ছিল
বয়সও বাড়ছিল তিরতির;
উত্তাল ঢেউয়ে বাড়ছিল পদ্মার
বেড়, আর বাড়ির উঠান
স্কুলঘরের সামনে পৎ পৎ
পতাকা উড়ানোর বাঁশ
পাশে বয়ে যাওয়া ক্ষীণধারা
মাথাভাঙার শীর্ণদেহ
কীর্তিনাশা খেয়ে ফেলে সব।
রিসাইকেল বিন থেকেও
উদ্ধার করা যায় না-
থেমে যায় আমার শৈশব
বাড়ছি আমি অন্যকোথাও
শৈশবটা ছায়াহীন
মনের গভীরে।