‘জাতিকে ঋণী করে গেছেন আল মাহমুদ’


আল মাহমুদের সাহিত্যকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন দেশের শীর্ষ কবি-কথাসাহিত্যিক ও গবেষকরা। তারা বলেছেন,
‘কালোত্তীর্ণ সাহিত্য দিয়ে আল মাহমুদ জাতিকে ঋণী করে গেছেন, যে ঋণী কখনোই শোধ হওয়ার নয়। বাংলার সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রূপকার তিনি। আল মাহমুদ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ বিনির্মানের আকাঙ্ক্ষা করে গেছেন সোনালী কাবিনে।’ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘কালের কলস লেখক সম্প্রীতি’ ও শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ‌‘জলছবি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

আল মাহমুদের ৮৮তম জন্মবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
অনুষ্ঠানে ‘তারুণ্যের মননে আল মাহমুদ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন কবি নাসির আহমেদ, আসলাম সানী, রেজাউদ্দিন স্টালিন, মারুফ রায়হান, কবি শাহীন রেজা, জাকির আবু জাফর, গবেষক ও সাংবাদিক ড. কাজল রশীদ শাহিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ড. ফজলুল হক তুহিন, বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপংকর দাশ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে একই শিরোনামে আবিদ আজম সম্পাদিত একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জলছবি সম্পাদক কবি জামসেদ ওয়াজেদ। উপস্থাপনা করেন আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদ ও কালের কলস সম্পাদক আবিদ আজম।

আয়োজনের শুরুতে প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরী, অসীম সাহা ও মাকিদ হায়দারের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জাকির আবু জাফর বলেন, ‘বাংলা ভাষায় নিজস্ব স্বর নির্মাণ করেছেন এমন অনেক কবি রয়েছেন। এর মাঝেও আল মাহমুদ আমার সবচেয়ে প্রিয় কবি, কারণ তিনি যে বাংলাদেশকে রূপায়িত করেছেন; সেই বাংলাদেশ মানুষের হৃদয় থেকে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশ।শহর এবং গ্রামের মধ্যে একটি আন্ত নদী স্থাপন করেছেন আল মাহমুদ। স্বাভাবিতভাবেই এটি অন্য কারো কবিতায় আমি অন্তত পাইনি।’

আল মাহমুদকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মাঝে বিভক্তি রয়েছে বলে মনে করেন গবেষক ও সাংবাদিক ড. কাজল রশীদ শাহিন। এজন্য কবির সৃষ্টি পাঠের সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, ‘‘আল মাহমুদ অনেকটা গলার কাঁটার মতো। তাকে গেলাও যায় না, আবার ফেলাও যায় না। আমার শিক্ষক কবি ময়ুখ চৌধুরী একবার বলেছিলেন ‘আল মাহমুদ হলেন কাঁটাওয়ালা মাছের মতো।’ এর অর্থ হলো কাঁটাওয়ালা মাছ অত্যন্ত দামি, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তবে শিশুরা কাঁটাওয়ালা মাছ পছন্দ করে না। কারণ এই মাছ খেতে হলে মাছ খাওয়ার বিদ্যা থাকতে হয়। যাদের এই বিদ্যা নেই তাদের কাছে মাছটি সুস্বাদু হলেও কখনো কখনো সেটি বিরক্তির কারণ হতে পারে।’’

কাজল রশীদ শাহিন বলেন, “আল মাহমুদ ‘সোনালী কাবিনের’ মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে ধরতে চেয়েছেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর স্বপ্নভঙ্গের যে অস্বস্তি ও আমাদের নিজস্ব যে লক্ষ্য তা তুলে এনেছেন নিজের প্রথম কবিতার বই ‘লোক লোকান্তরে’। তার পরের বই ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত ‘কালের কলসে’ রয়েছে বাংলাদেশকে খুঁজে ফেরার আকাঙ্ক্ষা।”

কবি আসলাম সানী বলেন, ‘আল মাহমুদকে আমি জীবন্ত বাংলাদেশ মনে করি। শৈশবে তার ছড়া আমাদের কী উজ্জীবিত করেছিল ভাবা যায় না। বিশ্বের যারা দ্রোহের কবি তাদের কাতারে তাঁর অন্যতম স্থান রয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘আল মাহমুদ কবি পরিচয়ের বাইরে গল্পকার হিসেবেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আল মাহমুদ একমাত্র কবি, যার কবিতায় দাম্পত্য আছে। সবচেয়ে ট্র্যাডিশনাল ছন্দে সবচেয়ে অসাধারণ কবিতা লিখেছেন তিনি।’

কবি মারুফ রায়হান বলেন, ‘কবি শামসুর রাহমানের প্রতিপক্ষ করে অকারণে আল মাহমুদকে টেনে আনা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি আল মাহমুদের কাছে গিয়েছি। আমি রাহমান ভাইয়ের কাছেও গিয়েছি। দুজনের কেউই কারও বিরুদ্ধে বিরাগভাজন ছিলেন না। কবিরা প্রকৃতির সন্তান। তাদের মধ্যে বিভেদ হয় না।’

বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপংকর দাশ বলেন, ‘আল মাহমুদ আমাদের জাতির জন্য অনেক বড় কবি। একটা দীর্ঘ সময় পরে এমন বড় কবি আসেন। আল মাহমুদকে তেমনই অনেক অপেক্ষার পরে বাঙালি পেয়েছে। তাকে অস্বীকার করা যাবে না। তাকে অস্বীকার করলে নিজেকেই অস্বীকার করা হবে।’

অনুষ্ঠান সংক্রান্ত আরও খবর
‘আল মাহমুদের সাহিত্যকর্ম ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়’
জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ: ‘তারুণ্যের মননে আল মাহমুদ’। সমকাল
জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ: ‘তারুণ্যের মননে আল মাহমুদ’। নয়াদিগন্ত
‘জাতিকে ঋণী করে গেছেন আল মাহমুদ’ । যুগান্তর
Al Mahmud’s birth anniv observed
কবি আল মাহমুদের জন্মবার্ষিকী উদযাপন/ ভোরের ডাক
আল মাহমুদের জন্মদিন পালন/বাংলাভিশন
‘বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অনিবার্য নাম আল মাহমুদ’/ ডেইলি স্টার