কথপোকথন


আজ একটু আগেই সকালের নাস্তা সারা হলো। কিছুটা সময় হাতে মিললো। বেশ আরাম করে একটা কফি পান করা যাক। রুশো কফিতে চুমুক না দিতেই মুঠোফোন বেজে উঠলো। অচেনা নম্বর; সকালে আবার কে কল দিলো রে বাবা? রুশো সাধারণত সকালে অফিসে যাওয়ার আগে জরুরি না হলে কারও কল রিসিভ করে না। কয়েকবার কল বাজার পরে রুশো রিসিভ করলো।

রুশো রহমান একটা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির উচ্চতর অফিসার পদে কর্মরত। রুশো বিয়ে করেছে মাত্র কয়েক মাস হলো। তার স্ত্রীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। রুশোর অন্য পরিচয় হলো, একজন ফিচার লেখক। শখের বশে বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের লেখা পাঠিয়ে থাকে। পরের পরিচয় ভালো লাগার হলেও কাউকে পরিচয় দিতে রুশো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। পরের পরিচয়টি প্রথম পরিচয়কে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি।

রুশো মুঠোফোনে কথা বলছে। কল কেটে গেলো, ভালো শোনা যাচ্ছিল না। পুনরায় কল এলো।
: আপনি রুশো রহমান?
: জি।
: আপনার কথা শুনেছি। আপনি নিশ্চয়ই আমার নাম শুনে থাকবেন। অফিসে যাওয়ার সময় বেশি সময় নষ্ট করবো না। আমিই তানভীর ইসলাম জয়! আপনি কতটা পারবেন? কখন পাববেন বলুন। আপনার নাম লিস্টে তুলি। আপনার ব্যক্তিগত কোনো ঝামেলা হলে বলবেন।
: শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়! আপনার নাম অনেকবার শুনেছি। আপনাকে আমি কয়েকদিন যাবত কল করবো ভাবছি। আপনার একটা সাক্ষাৎকার নেবো।
: আপনি সরকারি চাকরি করেন। আমার ইন্টারভিউ নিয়ে কী করবেন? দ্রুত মাল ছাড়ুন, সময় খারাপ!
: খারাপ সময়ে আপনাকে কাছে পেলে সাক্ষাৎকার নিতাম। আপনার কাহিনি পড়ার জন্য সব পাঠক মুখিয়ে রয়েছে।
: এসব খাজুরা আলাপ বাদ যাবে। আমি জয় ভায়ের পিএস বলছি। ভাই কথা বলবেন।
: হ্যাঁ, আমিও অবাক! ভরাট গলায় কথা বললো জয়। একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার ইচ্ছে! কত বলছেন না। আপনি বাড়ি নাটোরের বিলতি না?
: জি। তাতে কী? আপনার জীবন নিয়ে একটা স্টোরি বানাবো। স্টোরি থেকে মুভিও হতে পারে। দেখেননি দস্যু বিরাপ্পন কত হিট!
: থামুন! আগামী মাসে আমাদের কিছু লোককে জেল থেকে ছাড়াতে হবে। কিছু জিনিস কিনতে হবে। অনেক টাকা লাগবে। আপনি কত দিতে চান, বলছেন না কেন?
: আপনার কী জিনিস কেনা লাগবে? মেশিন? এখন কত করে কেনেন? আপনার ঠিকানা বলুন তো।
: রুশো সাহেব, আপনি বড্ড বেশি কথা বলছেন। জয় ভাই মাইন্ড করছেন।
: আহারে! আমার নিউজ করতে গেলে তথ্য নিতে হবে না!
: কিসের নিউজ? কার নিউজ? এসব ঢং বাদ দেন। দ্রুত বিকাশ অ্যাকাউন্টে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিন। নইলে আপনার ছেলে-মেয়ে ভালো থাকবে না। স্কুল থেকে তুলে নেবো। এত টাকা সরকারি বেতন পান, আবার ঘুষের টাকাও রয়েছে। আমাদের কিছু ভাগ আছে না?
: আমি সরকারি চাকরি করি কে বলেছে?
: আমরা জেনে-বুঝেই কল দেই এবং আদায় করে ছাড়ি।আপনার অফিসেও আমাদের ইনফরমার রয়েছে।
: হুম। তবে শুনুন, আমি সরকারি চাকরি করতাম। ছেড়ে দিয়েছি, এখন দৈনিক মুক্তপ্রভাত পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে আছি। আপনারা এত কিছু জানেন; এটা জানেন না? এখন বলুন ইন্টারভিউ কবে দেবেন? আমি আসব না আপনি আসবেন?

মোবাইলের অপর পাশে ভুল মানুষকে কল দেওয়ার জন্য একজন অন্যজনকে বিশ্রীভাবে গালিগালাজ করছে। শুনে রুশো মিটিমিটি হাসছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ, কল কেটে গেলে রুশো মোবাইল রেখে দিলো। ইতিপূর্বে সুব্রত বাইনের নাম ভাঙিয়ে রুশোকে কল দিয়েছিল বলেই রুশো আজকের পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারলো। বাসা থেকে বের হয়ে পথে রুশোর মনে পড়লো, শীর্ষ সন্ত্রাসী জয় বিদেশে মারা কয়েক বছর আগে। একটা পত্রিকায় সেই নিউজও পড়েছিল!