অনুবাদ: আকিব শিকদার
[ফেস্টাস ক্লডিয়াস ম্যাককে, ক্লদ ম্যাককে নামে পরিচিত, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯০ সালে জ্যামাইকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন টমাস ফ্রান্সিস ম্যাককে ও হান্না অ্যান এলিজাবেথ এডওয়ার্ডসের কনিষ্ঠ সন্তান। চার বছর বয়সে, ম্যাককে মাউন্ট জিয়ন চার্চে নামক স্কুলে ভর্তি হন। তার ভাইয়ের প্রভাবে ম্যাককে শাস্ত্রীয় ও ব্রিটিশ সাহিত্যের পাশাপাশি দর্শন, বিজ্ঞান এবং ধর্মতত্ত্বের একজন আগ্রহী পাঠক হয়ে ওঠেন। তিনি ১০ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন ।
ম্যাককে ১৯১৭ সালে এলি অ্যাডওয়ার্ডস ছদ্মনামে দ্য সেভেন আর্টসে দুটি কবিতা প্রকাশ করেন। লেনিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি পুনর্গঠনের সময় ম্যাকেকে রাশিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । ১৯২২ সালের নভেম্বরে তিনি পেট্রোগ্রাদ এবং মস্কোতে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের চতুর্থ কংগ্রেসে অংশগ্রহণের জন্য রাশিয়া ভ্রমণ করেছিলেন।
ম্যাককের রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর সাহিত্যকর্মে স্পষ্ট। বর্ণবাদী সমাজ ব্যবস্তায় শে^তাঙ্গদের আধিপত্য ও কৃষ্ণাঙ্গদের নিগৃহীত হওয়ার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। আফ্রিকান শিল্পের প্রতি এবং নারীর যৌনতার প্রতি মুগ্ধতা ছিল তার। ম্যাককের যৌনতার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার কিছু সাহিত্যকর্মে। তার ১৯২৯ সালের উপন্যাস ‘ব্যাঞ্জো: অ্যা স্টোরি উইদাউট অ্যা প্লট’-এর উদাহরণ।
সাহিত্য চর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি মুসগ্রেভ মেডেল ১৯১২, হারমন ফাউন্ডেশন পুরস্কার ১৯২৯, জেমস ওয়েলডন জনসন লিটারারি গিল্ড অ্যাওয়ার্ড ১৯৩৭ ইত্যাদি অর্জন করেন। ২২ মে, ১৯৪৮ তারিখে, তিনি ৫৮ বছর বয়সে শিকাগোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং তাকে নিউইয়র্কের কুইন্সের ক্যালভারি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।—অনুবাদ]
আমি ফিরে আসবো
আমি পুনরায় ফিরে আসবো; ফিরে আসবো হাসতে, ভালোবাসতে
এবং এই বিস্মিত নয়ন দুটো দিয়ে দেখতে
সোনালি দুপুর আর বনজঙ্গলের দহন; যার নীল-কালো ধোঁ
মিশে যায় নীলাভ নীলিমার মাঝে।
আমি ফিরে আসবো বিচরণ করতে সেইসব ঝর্ণার কাছে
যারা ঝরাচ্ছে স্নানের জল নতজানু ঘাসের ডগায়,
পুনরায় জেগে উঠবে আমার সহস্র স্বপ্নরা ঝরে পড়া পাহাড়ি জলে।
আমি ফিরে আসবো গ্রামীণ নাচের আসরে শুনতে বেহালা ও বাঁশি,
যার সরস সুর নাড়া দেয় আদিবাসী জীবনের সুপ্ত গভীরতা,
এবং যেখানে সন্তরপনে ঘুরে বেড়ায় আদিভাষার সুরেলা সংগীতের আবছায়।
আমি ফিরে আসবো, আমি পুনরায় ফিরে আসবো,
আমার এই দীর্ঘ, দীর্ঘ বছরগুলোর বেদনার্ত মনে শান্তি ফেরাতে।
চিরকালীন ফারাক
উষ্ণ বায়ুর স্পর্শে সাইবেরিয়ান বরফ গলতে শুরু করেছে।
আমার দীর্ঘশ্বাসের উষ্ণতায় তোমার পাথর হৃদয়
গলছে না হে পাষাণহৃদী।
আরবের ধূসর মরুতে মেঘময় শীতল হাওয়া বইছে
এবং বালুর ওপর গজিয়ে উঠছে সবুজ লতা।
অথচ তোমার মায়াবী জলধারা না পেতে পেতে
মরে মরুভূমি হচ্ছে আমার বুকের নদী।
এই যে বিচ্ছেদ, একে প্রেম ভাবা
পাহাড়কে গিরিখাদের সঙ্গে তুলনা করার মতো।
আমাদের এই চিরকালীন ফারাক টিকে রইবে আর কতো?